পশ্চিমবঙ্গের নদনদী, বিস্তারিত জানুন (Geography Notes)

পশ্চিমবঙ্গের নদনদী

পশ্চিমবঙ্গ একটি নদীমাতৃক রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ নদ-নদী উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে অথবা পশ্চিমের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়ে এই রাজ্যের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বয়ে গিয়েছে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে সৃষ্ট নদ-নদীগুলি বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে সারা বছর জল থাকে। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট নদ-নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট বলে বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় বিশেষ করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে জল খুব কমে যায় অথবা একদমই জল থাকেনা। পশ্চিমবঙ্গের ভূমিরূপের অবস্থান অনুযায়ী গঙ্গা, ইছামতি, রূপনারায়ণ ইত্যাদি নদ-নদীগুলোত জোয়ার-ভাটা খেলে। অন্যদিকে রাঢ় অঞ্চলের কংসাবতীর মতো নদীগুলোর অবস্থান উঁচু থাকায় জোয়ারের জল ঢোকেনা। ফলে বর্ষা ভালো হলে জল থাকে, আর না-হলে নদীবক্ষ শুকিয়ে যায়।

উৎপত্তি ও গতিপ্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলির প্রকার-

  • উত্তরবঙ্গের নদনদী অথবা বরফ গলা জলে পুষ্ট নদ-নদী
  • মধ্যভাগে গঙ্গা ও তার বিভিন্ন শাখানদী
  • পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদী অথবা বর্ষণ পুষ্ট নদ-নদী
  • দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী অথবা জোয়ার ভাটা জলে প্লাবিত নদ-নদী

উত্তরবঙ্গের নদনদী অথবা বরফ গলা জলে পুষ্ট নদনদী

উত্তরবঙ্গ উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতের হিমবাহ থেকে যে সকল নদী গুলি সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিস্তা, মহানন্দা, বালাসন, জলঢাকা, তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, সংকোশ প্রভৃতি।

তিস্তা নদী

উৎস

  • প্রকৃতপক্ষে নদীটির বাংলা নাম তিস্তা এসেছে ত্রিস্রোতা বা তিন প্রবাহ থেকে। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখা বলা হয়। সিকিম হিমালয়ের 7,200 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি দার্জিলিং -এ অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরিসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা একটি বন্য নদী এবং এর উপত্যকা ঘনবনে আচ্ছাদিত। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে প্রবাহটি দার্জিলিং সমভূমিতে নেমে আসে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করে। নদীটি নিলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

 প্রবাহপথ

  • তিস্তা নদীর উৎস উত্তর সিকিমের হিমালয় পর্বতমালার 5,330 মিটার (17,487 ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত সো লামো হ্রদে। হ্রদটি শেসচেনের কাছে ডোংখা গিরিপথের উত্তরে অবস্থিত।
  • তিস্তা নদী ছাঙ্গু, ইউমথাং ও ডোংকিয়া লা পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপন্ন ছোট ছোট নদীর জলে পুষ্ট। সিকিমের রংপো ও পশ্চিমবঙ্গের তিস্তাবাজার শহরের মাঝের অংশে তিস্তাই উভয় রাজ্যের সীমানা নির্দেশ করছে। তিস্তা সেতুর (যে সেতুটি দার্জিলিং ও কালিম্পং শহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে) ঠিক আগে তিস্তা তার প্রধান উপনদী রঙ্গিতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এখান থেকে তিস্তার গতি দক্ষিণমুখী। শিলিগুড়ি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সেবকের করোনেশন সেতু পেরিয়ে তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তারপর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে।

জলঢাকা নদী

জলঢাকা নদী আন্তঃসীমান্ত নদী । 192 কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটি দক্ষিণ-পূর্ব সিকিম-এ হিমালয় পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে ভুটান হয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা অতিক্রম করে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ।

রায়ডাক নদী (ভুটানে নাম ওয়াং ছু বা ওং ছু)

  • এটি হল ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী। এটি একটি আন্তর্জাতিক নদী। এটি ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • ওয়াং ছু বা রায়ডাক নদীর উৎস হিমালয় পর্বতমালা। উচ্চগতিতে এই নদী থিম্পু ছু নামে পরিচিত। মূল নদীটি খরস্রোতা। প্রস্তরময় নদীপথে এটির গতি। থিম্পু ও পারো ছু নদীর মোহনার মধ্যে এই নদীর গতিপথ অত্যন্ত সংকীর্ণ। কিন্তু তারপর এই পথ বিস্তার লাভ করেছে। সেখানে এটি অত্যন্ত খাড়াই ঢালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর এটি দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে একটি তুলনামূলকভাবে মুক্ত উপত্যকায় পড়েছে। কাছাকাছি পার্বত্য অঞ্চল থেকে একাধিক ছোটো নদী এসে এই নদীতে মিশেছ। পারো জংয়ের উজানে এই নদীর অন্যতম প্রধান উপনদী টা ছু এতে এসে বাম দিকে মিশেছে। পশ্চিম দিকে এই নদীর সঙ্গে মিশেছে হা ছু। তাশিছো জংয়ে নদীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2,121 মিটার (6,959 ফুট) উঁচুতে। কিন্তু যেখানে এই নদী ডুয়ার্সে প্রবেশ করছে সেখানে এই উচ্চতা মাত্র 90 মিটার (300 ফুট)।
  • পশ্চিমবঙ্গের আলুপুরদুয়ার জেলায় ডুয়ার্সে প্রবেশ করার পর এই নদী কোচবিহার জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় রায়ডাক ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। এই অঞ্চলে এই নদীর নাম দুধকুমার নদী।
  • রায়ডাক নদীর গতিপথের একক দৈর্ঘ্য 370 কিলোমিটার। তবে শাখা নদীগুলি নিয়ে শুধুমাত্র ভুটানেই এই নদীর দৈর্ঘ্য ৬১০ কিলোমিটার।

তোর্ষা নদী

তোর্ষা (তোর্সা) বা চুম্বি বা আমোছু নদী এশিয়ার একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। তিব্বত, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নদীটি প্রবাহিত।

উৎস ও প্রবাহপথ

পূর্ব তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার টাং-পাস থেকে উত্থিত হয়ে ভুটানের পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে নদীটি দক্ষিণে নেমেছে। নদীটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য 320 কিলোমিটার। উজানের স্রোতধারা চুম্বি নামেও অভিহিত হয়। ভুটানে এর নাম আমোছু। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় এবং বাংলাদেশে এই নদীর নাম তোরষা। তোরষা অর্থ তোয় রোষা অর্থাৎ রুষ্ট জলপ্রবাহ। সত্যিই তোরষা খ্যাপাটে স্বভাবের এক দুর্দান্ত নদী।

  • তোরষা নদী কুচবিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ধুবড়ির প্রায় 22.5 কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে। কুচবিহারের পশ্চিমে ধরলা নামে এ নদীর দক্ষিণ দিকস্থ একটি শাখা জলঢাকা নদীতে পড়েছে। কুচবিহারের প্রায় 29 কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রায়ডাক নদীর একটি শাখা তোরষা নদীতে মিশেছে এবং মিলনস্থলের ভাটিতে তোরষা নদীকে রায়ডাক বা দুধকুমার বলে।

মহানন্দা নদী

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য 360 কিলোমিটার, গড় প্রস্থ 460 মিটার।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • এর উৎপত্তিস্থল হিমালয় পর্বতের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলার অংশে। দার্জিলিং জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা দিয়ে প্রবেশ করে।
  • এর পর তেতুলিয়া পুরাতন বাজার দিয়ে আবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করে, পরে মালদা জেলা হয়ে আবার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের কাছে প্রবেশ করে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়। বৃষ্টির জল এই নদীর প্রবাহের প্রধান উৎস। ফলে গরম কাল ও শীতকালে নদীর পানি কমে যায়, আর বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কুল ছাপিয়ে বন্যা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর অংশটির দৈর্ঘ্য 36 কিমি।

উপনদী

  • পুনর্ভবা
  • নাগর
  • টাংগন
  • কুলিক

উত্তরবঙ্গের নদী গুলির বৈশিষ্ট্য :-

  • নদীগুলি হিমবাহের বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে এরা নিত্যবহ।
  • নদীগুলি পার্বত্য হইতে উৎপত্তি লাভ করে খাড়া সমভূমি তে পতিত হওয়ায় নদীর প্রসস্থ এবং অগভীর, তাই বর্ষার অতিরিক্ত জলে নদীগুলি প্লাবিত হয়ে প্রতিবছর বন্যা সৃষ্টি হয়।
  • সমভূমি অঞ্চলে নদীগুলি প্রতিনিয়ত নিজেদের গতিপথ পরিবর্তন করে।
  • নদীগুলি খরস্রোতা বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ।
  • পার্বত্য প্রবাহে নদীগুলি সুগভীর গিরিখাত গঠন করে নেমে এসেছে।
  • নদীগুলির পার্বত্য প্রবাহে একাধিক জলপ্রপাত দেখা যায়।

মধ্যভাগে গঙ্গা তার বিভিন্ন শাখানদী

গঙ্গা নদী

  • পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ নদী হল গঙ্গা। এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 2,704 কিমি যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে 528 কিমি দৈর্ঘ্য নিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • কুমায়ুন হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে উত্তরপ্রদেশ এবং পরে বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের নিকট গঙ্গা নদী পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান এর নিকট দুই ভাগে ভাগ হয়ে প্রধান শাখাটি পদ্মা নাম নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, অপর শাখাটি ভাগীরথী- হুগলি নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী–হুগলী নদীই গঙ্গা নামে পরিচিত । মুর্শিদাবাদ থেকে নবদ্বীপ শহর পর্যন্ত এই নদীর নাম ভাগীরথী এবং নবদ্বীপ থেকে মোহানা পর্যন্ত এই নদীর নাম হুগলী নদী।  এই নদীর তীরে কলকাতা নগরীর পত্তন হয়। পরবর্তীকালে এই নদীর তীরে হুগলি শিল্পাঞ্চল বিকাশ লাভ করে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কৃষি, জলসেচ, ব্যবসা বাণিজ্য, নৌপরিবহন, সংস্কৃতি ও পর্যটনে এই নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে ।

জলঙ্গী নদী

ভারত-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা ও নদিয়া জেলা দিয়ে প্রবাহিত। অতীতে এর নাম ছিল খড়ে নদী। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য 220 কিলোমিটারের কাছাকাছি। বর্তমানে নদীটিতে পলি জমে যাওয়ায় এটি তার গভীরতা হারিয়েছে।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • জলঙ্গী নদী মুর্শিদাবাদ জেলায় চর মধবোনার কাছে পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। উৎস স্থল থেকে দক্ষিণে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহ পথে নদীটি ইসলামপুর, ডোমকল, তেহট্ট, পলাশীপাড়া, চাপড়া অতিক্রম করে কৃষ্ণনগরের কাছে এসে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়েছে। এর পর নদীটি পশ্চিমমুখী হয়ে মায়াপুরের কাছে স্বরূপগঞ্জে গঙ্গা বা ভাগীরথী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই প্রবাহ পথের মোট দৈর্ঘ্য 220 কিলোমিটার। নদীটির প্রবাহ পথে প্রচুর নদী বাঁক ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়। ভৈরব নদী এই নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং এই নদীটিই জলঙ্গী নদীর বেশির ভাগ জলের যোগান দেয়। বর্ষার মরশুম ছাড়া গ্রীষ্মের মরশুমে নদীটির জল অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

মাথাভাঙ্গা নদী

উৎস ও প্রবাহপথ

  • মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গির উৎস থেকে আনুমানিক 16 কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী হতে।
  • মাথাভাঙ্গা নদীটি উৎপত্তিস্থল থেকে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার হাওলি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ইছামতি-কালিন্দী নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদীটির দৈর্ঘ্য 121 কিলোমিটার, প্রস্থ 29 মিটার এবং দর্শনার নিকট গভীরতা 10 মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন 500 বর্গকিলোমিটার। সাধারণত এই নদীর তীর উপচে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বন্যা হয় না।

ইছামতি নদী বা ইছামতি-কালিন্দি নদী

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য 334 কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ 370 মিটার।

চূর্ণী নদী

  • ভারতের নদীয়া জেলার মাজদিয়া মাথাভাঙ্গা নদী থাকে উৎপন্ন হয়েছে। এর পর নদীটি 56 কিমি প্রবাহিত হয়ে চাকদহর কাছে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। কুস্টিয়া জেলায় পদ্মা নদী থেকে মাথাভাঙ্গা নদী উৎপন্ন হয়ে নদীয়া জেলার মাজদিয়াতে নদীটি দুটি প্রবাহে ভাগ হয়। একটি শাখা ইছামতি নদী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে অন্যটি চুর্নী নামে দক্ষিণ-পশ্চিমে বাহিত হয়েছে। চুর্নী নদীটি মাজদিয়া, শিবনিবাস, হাঁসখালি, বীরনগর, আরংঘাটা, রানাঘাট, চাকদহ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির প্রবাহ পথে কিছু নদী চর বা দ্বীপ দেখা যায়। বর্তমানে নাব্যতা হারিয়েছে অতীতের বিখ্যাত নদী চূর্নী।

হুগলি নদী বা ভাগীরথী-হুগলী

  • পশ্চিমবঙ্গে নদীর একটি শাখানদী। পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় 260 কিলোমিটার। মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা বাঁধ থেকে একটি খালের আকারে নদীটি উৎসারিত হয়েছে। হুগলি জেলার হুগলি-চুঁচুড়া শহরটি (পূর্বনাম হুগলি) এই নদীর তীরে অবস্থিত।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • গঙ্গার 2539 কিলোমিটার দীর্ঘ পথের 528 কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত। রাজমহল পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিমে তেলিগড় ও সকরিগলির সংকীর্ণ গিরিপথটি ঘেঁষে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমায় গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। এরপর ধুলিয়ান শহরের নিকটে এটি ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। ভাগীরথীর প্রবাহ মুর্শিদাবাদ জেলাকে দুটি ভৌগোলিক অংশে বিভক্ত করেছে – বাগড়ি (পূর্বভাগে) ও রাঢ় (পশ্চিমভাগে)। এরপর নবদ্বীপ পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী ও নবদ্বীপ থেকে গঙ্গাসাগর অবধি এই নদী হুগলি নামে প্রবাহিত। নবদ্বীপের আরও দক্ষিণে হুগলি জেলা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা। এই নদী হালিশহর, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, কামারহাটী শহরগুলির পাশদিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপর কলকাতা এবং হাওড়া এর দ্বৈত শহর প্রবেশ করার আগে, এটি দক্ষিণ-পশ্চিমে নদীটি নূরপুরে গঙ্গার একটি পুরানো প্রবাহে প্রবেশ করে এবং নদীটি সাগরদ্বীপের দক্ষিণ পান্তে গঙ্গাসাগরের মোহনায় প্রায় 20 মাইল (32 কিলোমিটার) চওড়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়।
  • এর দুটি প্রধান উপনদী হল দামোদর ও রূপনারায়ণ। কলকাতা শহর ও মহানগর হুগলির তীরেই অবস্থিত। হুগলি নদীর গড় গভীরতা 200 ফুট এবং সর্বচ্চো গভীরতা 381ফুট।

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদী অথবা বর্ষণ পুষ্ট নদ-নদী

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদ-নদী বর্ষার জলে পুষ্ট এবং এদের বেশির ভাগের উৎপত্তি স্থল হল পশ্চিমের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল। ভূমি ভাগের ঢাল অনুসারে এই নদীগুলি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ভাগীরথী- হুগলি নদীতে এসে মিলিত হয়েছে। বর্ষন পুষ্ট বা বৃষ্টির জলে সৃষ্ট নদী গুলির মধ্যে দামোদর, কংসাবতী বা কাসাই, শিলাবতী বা শিলাই, অজয়, রূপনারায়ন, ময়ূরাক্ষী, সুবর্ণরেখা, কেলেঘাই, হলদি নদী উল্লেখযোগ্য।

দামোদর নদ

  • দামোদর নদ ভারতের ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একটি নদী। গঙ্গার শাখা হুগলীর উপনদী হল দামোদর। প্রতি বর্ষায় দামোদরের বন্যায় অনেক প্রাণ ও সম্পত্তি হানির কারণে দামোদর নদ “বাংলার দুঃখ” নামে আখ্যায়িত। পরবর্তীকালে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর নদী অববাহিকায় বাধ দিয়ে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে বন্যা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি দামোদর নদের অববাহিকা অঞ্চলে গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা সঞ্চয় থাকার ফলে এর উপর ভিত্তি করে দুর্গাপুর আসানসোল বার্নপুর কুলটি প্রভৃতি শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
  • উৎস : ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমিতে, পালামৌ জেলার টোরির নিকট উচ্চগিরি শৃঙ্গ।
  • দৈর্ঘ্ 529 কি.মি.
  • অববাহিকা : সর্পিল গতিতে বয়ে চলা দামোদরের 24,235 বর্গ কি.মি. বিস্তীর্ণ অববাহিকা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পালামৌ, হাজারীবাগ, কোডার্মা, গিরিডি, ধানবাদ, বোকারো, চাতরা জেলা, এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান ও হুগলী জেলার অধিকাংশ জুড়ে বিস্তৃত। এছাড়া ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, রাঁচি, লোহারডগা, ও দুমকা জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা, ও হাওড়া জেলার স্বল্প কিছু অংশও দামোদর উপত্যকার অংশ।
  • উপনদী : বরাকর নদী, কোনার নদ, উশ্রী, বোকারো নদী ইত্যাদি।

রূপনারায়ণ নদী

  • রূপনারায়ণ নদী হল দ্বারকেশ্বর নদ ও শিলাই নদীর মিলিত প্রবাহ। দ্বারকেশ্বর নদ পুরুলিয়ার ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঁকুড়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল শহরের কাছে শিলাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ নদীর জন্ম হয়; এরপর কিছুপথ প্রবাহিত হয়ে তা পুরনো দামোদর নদ বা মুণ্ডেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। এই মিলিত স্রোত এরপর হুগলি নদীতে এসে পড়ে।
  • নদীটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 80 কিলোমিটার। নদীটি ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এই নদীর তীরেই স্থাপিত হয়েছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নদীটি বর্ষার সময় বন্যার সৃষ্টি করে। তাই নদীটিতে কিছু স্থানে নদী বাঁধ গড়া হয়েছে। নদীটিকে কেন্দ্র করে জলপথে পণ্য পরিবহনের কথা ভাবছে কেন্দ্র সরকার। নদীটি বর্তমানে নাব্যতা সংকট, দূষন জলের সমস্যায় জর্জরিত।

ময়ূরাক্ষী নদী

ময়ূরাক্ষি নদী হল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি দামোদর নদ পরিকল্পনা (D.V.C) ব্যবস্থার অন্তর্গত। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য 250 কিলোমিটার।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • ময়ূরাক্ষী নদী ঝাড়খণ্ডের ত্রিকুট পাহাড় থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর পর নদীটি পূর্ববাহিনী হয়ে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর জেলা ও দুমকা জেলা অতিক্রম করে ঝাড়খন্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে বীরভূম জেলায় প্রবেশ করেছে। শেষে নদীটি মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলি নদীতে মিলিত হয়েছে। এর প্রবাহপথ জুড়ে বহু উপনদী রয়েছে। নদীটির মোট প্রবাহ পথ 250 কিমি।

অজয় নদ

  • ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের একটি বন্যাসঙ্কুল নদী যা গঙ্গার অন্যতম প্রধান শাখা ভাগীরথী হুগলির উপনদী। অজয় নামটির অর্থ যাকে জয় করা যায় না।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • বিহারের জামুই জেলা চাকাই ব্লকের বাটপার অঞ্চলের 300 মিটার উচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে এটি দেবীপুরের নিকটে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করে (দেওঘরের প্রস্তাবিত শিল্প অঞ্চল) দিয়ে গিয়ে অজয় নদ ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনের নিকট শিমজুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং এটি প্রথম পশ্চিম বর্ধমান জেলা এবং ঝাড়খণ্ড হয়ে এবং পরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া ঘাট, বীরকুলটি ঘাট, দরবারডাঙা ঘাট ও সিদ্ধপুর ঘাট হয়ে এবং বীরভূম জেলার বড়কোলা, তামড়া, বিনুই ও নবসন গ্রামের সীমানা হয়ে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম থানার নারেং গ্রামের প্রবেশ করে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথী নদীর সংগে মিলিত হয়েছে।
  • অজয় নদের মোট দৈর্ঘ্য 288 কিলোমিটার (179 মাইল) তার মধ্যে শেষ 152 কিলোমিটার (94 মাইল) পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে।

কংসাবতী বা কাঁসাই

দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান নদী। কালিদাসের মেঘদূত ও অন্যান্য সংস্কৃত সাহিত্যগ্রন্থে এই নদী কপিশা নামে উল্লিখিত। কিংবদন্তী অনুসারে, সমুদ্রের কাছে বাগদত্তা কংসাবতী কৃষ্ণ দামোদর নদের রূপে আলিঙ্গন করতে ছুটে এলে কংসাবতী দ্রুত ধাবমান হয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়। মেদিনীপুর শহর এই নদীর তীরে অবস্থিত।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • পুরুলিয়া জেলার ঝালদা অঞ্চলে প্রায় 600 মিটার উঁচু পাহাড় ঝাবরবন কাঁসাই নালার আকারে কংসাবতী নদীর উৎপত্তি। নিকটবর্তী অযোধ্যা পাহাড় থেকে সাহারঝোরা নামে একটি ছোট নালা এরপর বেগুনকুদারের কাছে কংসাবতীতে মিশেছে। তেলদিহি গ্রামের কাছে বান্দু বা বন্ধু নদী কংসাবতীতে পড়েছে।
  • এরপর কংসাবতী পুরুলিয়া-চান্ডিল রেললাইন পেরিয়ে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে কিছুদূরে কারমারা নামার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভেদুয়া গ্রাম পার হয়ে এই নদী বাঁকুড়া জেলায় প্রবেশ করেছে। বাঁকুড়াতেই কংসাবতীর প্রধান উপনদী কুমারী নদীর সঙ্গে এর মিলন। মুকুটমণিপুরে কংসাবতী ও কুমারী নদীর মিলনস্থলে বিখ্যাত কংসাবতী বাঁধ ও জলাধারটি গড়ে উঠেছে।
  • বাঁধ ছেড়ে বেরিয়ে রায়পুরের পাশ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে মেদিনীপুর জেলার বিনপুর অঞ্চলে প্রবেশ করেছে কংসাবতী। ভৈরববাঁকী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে এরপর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করেছে এই নদী। কেশপুরের কাছে নদী দুটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। একটি শাখা দাশপুর অঞ্চলের উপর দিয়ে পালারপাই নামে প্রবাহিত হয়ে রূপনারায়ণ নদের দিকে এগিয়ে গেছে ও অপর শাখাটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে কালিয়াঘাই বা কেলেঘাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

সুবর্ণরেখা নদী

  • রাঁচির কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ঊড়িষ্যার রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঊড়িষার তালসারির কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। নদীটি রাঁচির কাছে হুডু জলপ্রপাত থেকে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খন্ডের সিঙভূম জেলা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর (পূর্ব) ঝাড়গ্রাম (বর্তমান) জেলা হয়ে ওডিশায় প্রবেশ করে। এরপর এটি বঙ্গোপসাগরে মেশে। এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য হল 395 কিমি।

দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী অথবা জোয়ার ভাটা জলে প্লাবিত নদ-নদী

জোয়ারের জলে প্লাবিত নদী বলতে সুন্দরবনের অন্তর্গত নদী এবং সামুদ্রিক খাড়ি গুলিকে বোঝায়। এরা মূলত ভাগীরথী ও হুগলি নদীর শাখানদী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা একে অপরের সাথে যুক্ত। এই নদী গুলির মধ্যে মাতলা, হাড়িয়াভাঙ্গা, পিয়ালী, ঠাকুরান, সপ্তমুখী, গোসাবা, রায়মঙ্গল, ইচ্ছামতি প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ঠাকুরণ নদ

ভারতের পূর্বদিকে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে সুন্দরবনাঞ্চলে প্রবাহিত একটি জোয়ারের জলে পুষ্ট নদী৷

উৎপত্তি ও প্রবাহ

  • নদীটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরের নিকট উৎপত্তি লাভ করেছে৷ নদীটির সাথে শাখাপথে ও খালপথে সংযোগ রয়েছে সুন্দরবনের বৃহৎ নদীগুলির অন্যতম সপ্তমুখী নদীর সাথে৷

প্রবাহপথের বর্ণনা:

  • ঠাকুরণ নদীব্যবস্থা উৎপত্তিস্থল থেকে বঙ্গোপসাগরের নিকট অধিক প্রশস্ত৷ ঠাকুরণ নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত পার্শ্বীয় শাখাগুলি হলো; কদ্রুখালি খাল, দমদমা খাল, মণি নদী, পুকছড়া, রায়দিঘী, শিবুয়া নদী, পাখিরালি খাল এবং রসের খাঁড়ি৷ আবার পূর্বতীরে অবস্থিত পার্শ্বীয় শাখাগুলি মূলত বিসর্প পথে গতিমান যেমন; বৈঁচাপি খাল, গুরা খাল, কাইকলমারি-আজমলমারি-সুইয়া নদী, দুলিভাসানী নদী এবং চুলকাটি নদী৷ প্রতিটি বিসর্পপথই জোয়ারের ফলে একে অপরের সাথে অন্তর্যুক্ত হয়ে পড়ে নদীজালিকা গঠন করে৷
  • ঠাকুরণ নদীর দুইতীরে অবস্থিত বনাঞ্চল আইনের আওতায় সংরক্ষিত৷ এগুলি মূলত লবণাম্বুজ জাতীয়৷ নদীর পূর্বতীরের অংশ সুন্দরবনের ব্যাঘ্র অভয়ারণ্য অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানে পশু ও পক্ষীবিশারদ এবং পর্যটক ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ৷
  • নদীর তীরে বেশির্ভাগ স্থানে পরিকল্পিতভাবে উঁচু নদীবাঁধ দেওয়া হলেও প্রায় সময়েই জলস্তর বৃদ্ধির কারণে নদীর দুকুল উপচে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷

পিয়ালি নদী

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন অঞ্চলের একটি জোয়ার-সম্বন্ধীয় মোহনাজ নদী। বামনঘাটার 14 কিলোমিটার বিদ্যাধরী নদী থেকে পিয়ালি নদীর উৎপত্তি। এরপর দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ক্যানিং-এর প্রায় 32 কিলোমিটার দক্ষিণে মাতলা নদীতে মিশেছে। মাতলা নদীর সঙ্গে পিয়ালি কুলতলা গাঙের মাধ্যমেও যুক্ত যেটি আবার ঠাকুরান নদীর সঙ্গে যুক্ত।

মাতলা নদী

  • পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি প্রবাহ পথে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি প্রবাহ কুলতলি গরানবোস হয়ে সুন্দরবন গেছে অন্য প্রবাহটি বাসন্তি, পাঠানখালি, সূর্যবেড়িয়া হয়ে বিদ্যাধরী নদীতে মিলিত হয়েছে।
  • বর্ষার সময় মাতলা নদীতে জল প্রবাহ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় ফলে নদীটিতে নৌকা বা লঞ্চ চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে আবার শুষ্ক মরশুমে নদীটিতে জলের প্রবাহ কমে যায় ফলে নৌকা বা লঞ্চ নদীর তীরের জেটিতে আসতে পারেনা। বর্ষার সময় নদীটি দুই তীরে প্লাবিত করে বন্যা সৃষ্ট করে। তাই মাতলা নদীর পাড় বরাবর আশেপাশের অঞ্চলের গ্রামগুলিকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
  • ক্যানিং শহরে মাতলা নদীর উপর 644 মিটার (2,113 ফুট) দীর্ঘ একটি সেতু উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য 2011 সালের জানুায়ারি মাসে। সেতুটি মাতলা সেতু নামে পরিচিত।

গোসাবা নদী

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবন এলাকার একটি উপকূলবর্তী নদী। এই নদী সমুদ্রের জোয়ারের জলে পুষ্ট তাই এ নদীর জল লবণাক্ত। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত। এই নদী মাতলা ও রায়মঙ্গল নদীর মিলনের ফলে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি উৎপন্ন হয়ে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

সপ্তমুখী নদী

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবন এলাকার একটি উপকূলবর্তী নদী। এই নদী জোয়ারের জলে পুষ্ট। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুলতানপুরে উৎপন্ন হয়েছে। এর পর নদীটি কুলপি ও মথুরাপুর ব্লকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিহ হয়েছে। প্রবাহ পথে নদীটি মুড়িগঙ্গা নদী ও দেওগ্রা খালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। নদীটির মোট প্রবাহ পথের দৈর্ঘ্য হল 80 কিলোমিটার।

রায়মঙ্গল নদী

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য 62 কিলোমিটার, গড় প্রস্থ 2,265 মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
  • রায়মঙ্গল নদীটি সুন্দরবনের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের কাছে ইছামতি নদী কয়েকটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঝিলা নদী, কালিন্দী নদী এবং যমুনা নদী। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে এই নদীগুলো প্রশাখা বিস্তার করেছে। নদীটি সুন্দরবনের অভ্যন্তরস্থ নৌচলাচল পথ হিসেবে নদীটি ব্যবহৃত হয়। নদীটি উপকূলীয় জোয়ার ভাঁটার নদী।

বিদ্যাধরী নদী

  • পশ্চিমবঙ্গের একটি নদী। এই নদীর উৎসস্থল নদিয়া জেলার হরিণঘাটা। এরপর বিদ্যাধরী উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসত, দেগঙ্গা ও হাবরা এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুন্দরবনে রায়মঙ্গল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বিদ্যাধরী নদী প্রাচীন বঙ্গীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান নদীপথ ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এই নদীর তীরেই চন্দ্রকেতুগড় নদীবন্দরটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে এই নদী উত্তর চব্বিশ পরগনা ও কলকাতার অন্যতম প্রধান নিকাশি মাধ্যম।
  • সুন্দরবন এলাকায় পরস্পরসংযুক্ত একাধিক জলপথের জটিল আবর্তের দেখা যায়। এই অঞ্চলের বৃহৎ নদীগুলি অনেক ক্ষেত্রেই এক মাইল চওড়া ও দক্ষিণবাহী। বিদ্যাধরী নদীও অনুরূপ একটি নদী। গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এবং সপ্তদশ শতাব্দীর পর থেকে হুগলি নদীর পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে এই নদীতে মিষ্টি জলের পরিমাণ অল্পই।

কালিন্দী নদী

  • সুন্দরবনের কাছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের কাছে ইছামতি নদী কয়েকটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঝিলা নদী, কালিন্দী নদী এবং যমুনা নদী। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে এই নদীগুলো প্রশাখা বিস্তার করেছে।

সুন্দরবন অঞ্চলের নদী গুলির বৈশিষ্ট্য

  • সামুদ্রিক জোয়ারে নদী গুলি প্লাবিত হওয়ায় জোয়ারের সময় নদী গুলিতে নৌকা চলাচল করলেও ভাটার সময় নদীগুলি নৌপরিবহনে অযোগ্য।
  • সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় নদীগুলির জল লবণাক্ত হয়ে পড়েছে।
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নদীগুলি সামুদ্রিক খাড়িতে পর্যবসিত হয়েছে।
  • নদীখাত গুলি দীর্ঘদিনের পলি সঞ্চায়ে ভরাট হয়ে পড়েছে তাই নদীগুলি অত্যন্ত অগভীর এবং অনেক সময় নদীগুলি তাদের মূল প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
  • সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার ফলে মৎস্য শিকারে নদীগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি এই নদীগুলি স্থানীয় জীবনযাত্রা প্রণালীকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের নদনদী

পশ্চিমবঙ্গ একটি নদীমাতৃক রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ নদ-নদী উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে অথবা পশ্চিমের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়ে এই রাজ্যের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বয়ে গিয়েছে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে সৃষ্ট নদ-নদীগুলি বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে সারা বছর জল থাকে। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট নদ-নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট বলে বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় বিশেষ করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে জল খুব কমে যায় অথবা একদমই জল থাকেনা। পশ্চিমবঙ্গের ভূমিরূপের অবস্থান অনুযায়ী গঙ্গা, ইছামতি, রূপনারায়ণ ইত্যাদি নদ-নদীগুলোত জোয়ার-ভাটা খেলে। অন্যদিকে রাঢ় অঞ্চলের কংসাবতীর মতো নদীগুলোর অবস্থান উঁচু থাকায় জোয়ারের জল ঢোকেনা। ফলে বর্ষা ভালো হলে জল থাকে, আর না-হলে নদীবক্ষ শুকিয়ে যায়।

উৎপত্তি ও গতিপ্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলির প্রকার-

  • উত্তরবঙ্গের নদনদী অথবা বরফ গলা জলে পুষ্ট নদ-নদী
  • মধ্যভাগে গঙ্গা ও তার বিভিন্ন শাখানদী
  • পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদী অথবা বর্ষণ পুষ্ট নদ-নদী
  • দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী অথবা জোয়ার ভাটা জলে প্লাবিত নদ-নদী

উত্তরবঙ্গের নদনদী অথবা বরফ গলা জলে পুষ্ট নদনদী

উত্তরবঙ্গ উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতের হিমবাহ থেকে যে সকল নদী গুলি সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিস্তা, মহানন্দা, বালাসন, জলঢাকা, তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, সংকোশ প্রভৃতি।

তিস্তা নদী

উৎস

  • প্রকৃতপক্ষে নদীটির বাংলা নাম তিস্তা এসেছে ত্রিস্রোতা বা তিন প্রবাহ থেকে। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখা বলা হয়। সিকিম হিমালয়ের 7,200 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি দার্জিলিং -এ অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরিসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা একটি বন্য নদী এবং এর উপত্যকা ঘনবনে আচ্ছাদিত। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে প্রবাহটি দার্জিলিং সমভূমিতে নেমে আসে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করে। নদীটি নিলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

 প্রবাহপথ

  • তিস্তা নদীর উৎস উত্তর সিকিমের হিমালয় পর্বতমালার 5,330 মিটার (17,487 ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত সো লামো হ্রদে। হ্রদটি শেসচেনের কাছে ডোংখা গিরিপথের উত্তরে অবস্থিত।
  • তিস্তা নদী ছাঙ্গু, ইউমথাং ও ডোংকিয়া লা পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপন্ন ছোট ছোট নদীর জলে পুষ্ট। সিকিমের রংপো ও পশ্চিমবঙ্গের তিস্তাবাজার শহরের মাঝের অংশে তিস্তাই উভয় রাজ্যের সীমানা নির্দেশ করছে। তিস্তা সেতুর (যে সেতুটি দার্জিলিং ও কালিম্পং শহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে) ঠিক আগে তিস্তা তার প্রধান উপনদী রঙ্গিতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এখান থেকে তিস্তার গতি দক্ষিণমুখী। শিলিগুড়ি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সেবকের করোনেশন সেতু পেরিয়ে তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তারপর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে।

জলঢাকা নদী

জলঢাকা নদী আন্তঃসীমান্ত নদী । 192 কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটি দক্ষিণ-পূর্ব সিকিম-এ হিমালয় পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে ভুটান হয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা অতিক্রম করে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ।

রায়ডাক নদী (ভুটানে নাম ওয়াং ছু বা ওং ছু)

  • এটি হল ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী। এটি একটি আন্তর্জাতিক নদী। এটি ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • ওয়াং ছু বা রায়ডাক নদীর উৎস হিমালয় পর্বতমালা। উচ্চগতিতে এই নদী থিম্পু ছু নামে পরিচিত। মূল নদীটি খরস্রোতা। প্রস্তরময় নদীপথে এটির গতি। থিম্পু ও পারো ছু নদীর মোহনার মধ্যে এই নদীর গতিপথ অত্যন্ত সংকীর্ণ। কিন্তু তারপর এই পথ বিস্তার লাভ করেছে। সেখানে এটি অত্যন্ত খাড়াই ঢালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর এটি দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে একটি তুলনামূলকভাবে মুক্ত উপত্যকায় পড়েছে। কাছাকাছি পার্বত্য অঞ্চল থেকে একাধিক ছোটো নদী এসে এই নদীতে মিশেছ। পারো জংয়ের উজানে এই নদীর অন্যতম প্রধান উপনদী টা ছু এতে এসে বাম দিকে মিশেছে। পশ্চিম দিকে এই নদীর সঙ্গে মিশেছে হা ছু। তাশিছো জংয়ে নদীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2,121 মিটার (6,959 ফুট) উঁচুতে। কিন্তু যেখানে এই নদী ডুয়ার্সে প্রবেশ করছে সেখানে এই উচ্চতা মাত্র 90 মিটার (300 ফুট)।
  • পশ্চিমবঙ্গের আলুপুরদুয়ার জেলায় ডুয়ার্সে প্রবেশ করার পর এই নদী কোচবিহার জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় রায়ডাক ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। এই অঞ্চলে এই নদীর নাম দুধকুমার নদী।
  • রায়ডাক নদীর গতিপথের একক দৈর্ঘ্য 370 কিলোমিটার। তবে শাখা নদীগুলি নিয়ে শুধুমাত্র ভুটানেই এই নদীর দৈর্ঘ্য ৬১০ কিলোমিটার।

তোর্ষা নদী

তোর্ষা (তোর্সা) বা চুম্বি বা আমোছু নদী এশিয়ার একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। তিব্বত, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নদীটি প্রবাহিত।

উৎস ও প্রবাহপথ

পূর্ব তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার টাং-পাস থেকে উত্থিত হয়ে ভুটানের পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে নদীটি দক্ষিণে নেমেছে। নদীটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য 320 কিলোমিটার। উজানের স্রোতধারা চুম্বি নামেও অভিহিত হয়। ভুটানে এর নাম আমোছু। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় এবং বাংলাদেশে এই নদীর নাম তোরষা। তোরষা অর্থ তোয় রোষা অর্থাৎ রুষ্ট জলপ্রবাহ। সত্যিই তোরষা খ্যাপাটে স্বভাবের এক দুর্দান্ত নদী।

  • তোরষা নদী কুচবিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ধুবড়ির প্রায় 22.5 কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে। কুচবিহারের পশ্চিমে ধরলা নামে এ নদীর দক্ষিণ দিকস্থ একটি শাখা জলঢাকা নদীতে পড়েছে। কুচবিহারের প্রায় 29 কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রায়ডাক নদীর একটি শাখা তোরষা নদীতে মিশেছে এবং মিলনস্থলের ভাটিতে তোরষা নদীকে রায়ডাক বা দুধকুমার বলে।

মহানন্দা নদী

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য 360 কিলোমিটার, গড় প্রস্থ 460 মিটার।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • এর উৎপত্তিস্থল হিমালয় পর্বতের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলার অংশে। দার্জিলিং জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা দিয়ে প্রবেশ করে।
  • এর পর তেতুলিয়া পুরাতন বাজার দিয়ে আবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করে, পরে মালদা জেলা হয়ে আবার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের কাছে প্রবেশ করে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়। বৃষ্টির জল এই নদীর প্রবাহের প্রধান উৎস। ফলে গরম কাল ও শীতকালে নদীর পানি কমে যায়, আর বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কুল ছাপিয়ে বন্যা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর অংশটির দৈর্ঘ্য 36 কিমি।

উপনদী

  • পুনর্ভবা
  • নাগর
  • টাংগন
  • কুলিক

উত্তরবঙ্গের নদী গুলির বৈশিষ্ট্য :-

  • নদীগুলি হিমবাহের বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে এরা নিত্যবহ।
  • নদীগুলি পার্বত্য হইতে উৎপত্তি লাভ করে খাড়া সমভূমি তে পতিত হওয়ায় নদীর প্রসস্থ এবং অগভীর, তাই বর্ষার অতিরিক্ত জলে নদীগুলি প্লাবিত হয়ে প্রতিবছর বন্যা সৃষ্টি হয়।
  • সমভূমি অঞ্চলে নদীগুলি প্রতিনিয়ত নিজেদের গতিপথ পরিবর্তন করে।
  • নদীগুলি খরস্রোতা বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ।
  • পার্বত্য প্রবাহে নদীগুলি সুগভীর গিরিখাত গঠন করে নেমে এসেছে।
  • নদীগুলির পার্বত্য প্রবাহে একাধিক জলপ্রপাত দেখা যায়।

মধ্যভাগে গঙ্গা তার বিভিন্ন শাখানদী

গঙ্গা নদী

  • পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ নদী হল গঙ্গা। এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 2,704 কিমি যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে 528 কিমি দৈর্ঘ্য নিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • কুমায়ুন হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে উত্তরপ্রদেশ এবং পরে বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের নিকট গঙ্গা নদী পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান এর নিকট দুই ভাগে ভাগ হয়ে প্রধান শাখাটি পদ্মা নাম নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, অপর শাখাটি ভাগীরথী- হুগলি নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী–হুগলী নদীই গঙ্গা নামে পরিচিত । মুর্শিদাবাদ থেকে নবদ্বীপ শহর পর্যন্ত এই নদীর নাম ভাগীরথী এবং নবদ্বীপ থেকে মোহানা পর্যন্ত এই নদীর নাম হুগলী নদী।  এই নদীর তীরে কলকাতা নগরীর পত্তন হয়। পরবর্তীকালে এই নদীর তীরে হুগলি শিল্পাঞ্চল বিকাশ লাভ করে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কৃষি, জলসেচ, ব্যবসা বাণিজ্য, নৌপরিবহন, সংস্কৃতি ও পর্যটনে এই নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে ।

জলঙ্গী নদী

ভারত-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা ও নদিয়া জেলা দিয়ে প্রবাহিত। অতীতে এর নাম ছিল খড়ে নদী। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য 220 কিলোমিটারের কাছাকাছি। বর্তমানে নদীটিতে পলি জমে যাওয়ায় এটি তার গভীরতা হারিয়েছে।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • জলঙ্গী নদী মুর্শিদাবাদ জেলায় চর মধবোনার কাছে পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। উৎস স্থল থেকে দক্ষিণে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহ পথে নদীটি ইসলামপুর, ডোমকল, তেহট্ট, পলাশীপাড়া, চাপড়া অতিক্রম করে কৃষ্ণনগরের কাছে এসে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়েছে। এর পর নদীটি পশ্চিমমুখী হয়ে মায়াপুরের কাছে স্বরূপগঞ্জে গঙ্গা বা ভাগীরথী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই প্রবাহ পথের মোট দৈর্ঘ্য 220 কিলোমিটার। নদীটির প্রবাহ পথে প্রচুর নদী বাঁক ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়। ভৈরব নদী এই নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং এই নদীটিই জলঙ্গী নদীর বেশির ভাগ জলের যোগান দেয়। বর্ষার মরশুম ছাড়া গ্রীষ্মের মরশুমে নদীটির জল অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

মাথাভাঙ্গা নদী

উৎস ও প্রবাহপথ

  • মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গির উৎস থেকে আনুমানিক 16 কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী হতে।
  • মাথাভাঙ্গা নদীটি উৎপত্তিস্থল থেকে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার হাওলি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ইছামতি-কালিন্দী নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদীটির দৈর্ঘ্য 121 কিলোমিটার, প্রস্থ 29 মিটার এবং দর্শনার নিকট গভীরতা 10 মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন 500 বর্গকিলোমিটার। সাধারণত এই নদীর তীর উপচে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বন্যা হয় না।

ইছামতি নদী বা ইছামতি-কালিন্দি নদী

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য 334 কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ 370 মিটার।

চূর্ণী নদী

  • ভারতের নদীয়া জেলার মাজদিয়া মাথাভাঙ্গা নদী থাকে উৎপন্ন হয়েছে। এর পর নদীটি 56 কিমি প্রবাহিত হয়ে চাকদহর কাছে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। কুস্টিয়া জেলায় পদ্মা নদী থেকে মাথাভাঙ্গা নদী উৎপন্ন হয়ে নদীয়া জেলার মাজদিয়াতে নদীটি দুটি প্রবাহে ভাগ হয়। একটি শাখা ইছামতি নদী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে অন্যটি চুর্নী নামে দক্ষিণ-পশ্চিমে বাহিত হয়েছে। চুর্নী নদীটি মাজদিয়া, শিবনিবাস, হাঁসখালি, বীরনগর, আরংঘাটা, রানাঘাট, চাকদহ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির প্রবাহ পথে কিছু নদী চর বা দ্বীপ দেখা যায়। বর্তমানে নাব্যতা হারিয়েছে অতীতের বিখ্যাত নদী চূর্নী।

হুগলি নদী বা ভাগীরথী-হুগলী

  • পশ্চিমবঙ্গে নদীর একটি শাখানদী। পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় 260 কিলোমিটার। মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা বাঁধ থেকে একটি খালের আকারে নদীটি উৎসারিত হয়েছে। হুগলি জেলার হুগলি-চুঁচুড়া শহরটি (পূর্বনাম হুগলি) এই নদীর তীরে অবস্থিত।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • গঙ্গার 2539 কিলোমিটার দীর্ঘ পথের 528 কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত। রাজমহল পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিমে তেলিগড় ও সকরিগলির সংকীর্ণ গিরিপথটি ঘেঁষে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমায় গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। এরপর ধুলিয়ান শহরের নিকটে এটি ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। ভাগীরথীর প্রবাহ মুর্শিদাবাদ জেলাকে দুটি ভৌগোলিক অংশে বিভক্ত করেছে – বাগড়ি (পূর্বভাগে) ও রাঢ় (পশ্চিমভাগে)। এরপর নবদ্বীপ পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী ও নবদ্বীপ থেকে গঙ্গাসাগর অবধি এই নদী হুগলি নামে প্রবাহিত। নবদ্বীপের আরও দক্ষিণে হুগলি জেলা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা। এই নদী হালিশহর, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, কামারহাটী শহরগুলির পাশদিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপর কলকাতা এবং হাওড়া এর দ্বৈত শহর প্রবেশ করার আগে, এটি দক্ষিণ-পশ্চিমে নদীটি নূরপুরে গঙ্গার একটি পুরানো প্রবাহে প্রবেশ করে এবং নদীটি সাগরদ্বীপের দক্ষিণ পান্তে গঙ্গাসাগরের মোহনায় প্রায় 20 মাইল (32 কিলোমিটার) চওড়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়।
  • এর দুটি প্রধান উপনদী হল দামোদর ও রূপনারায়ণ। কলকাতা শহর ও মহানগর হুগলির তীরেই অবস্থিত। হুগলি নদীর গড় গভীরতা 200 ফুট এবং সর্বচ্চো গভীরতা 381ফুট।

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদী অথবা বর্ষণ পুষ্ট নদ-নদী

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদ-নদী বর্ষার জলে পুষ্ট এবং এদের বেশির ভাগের উৎপত্তি স্থল হল পশ্চিমের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল। ভূমি ভাগের ঢাল অনুসারে এই নদীগুলি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ভাগীরথী- হুগলি নদীতে এসে মিলিত হয়েছে। বর্ষন পুষ্ট বা বৃষ্টির জলে সৃষ্ট নদী গুলির মধ্যে দামোদর, কংসাবতী বা কাসাই, শিলাবতী বা শিলাই, অজয়, রূপনারায়ন, ময়ূরাক্ষী, সুবর্ণরেখা, কেলেঘাই, হলদি নদী উল্লেখযোগ্য।

দামোদর নদ

  • দামোদর নদ ভারতের ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একটি নদী। গঙ্গার শাখা হুগলীর উপনদী হল দামোদর। প্রতি বর্ষায় দামোদরের বন্যায় অনেক প্রাণ ও সম্পত্তি হানির কারণে দামোদর নদ “বাংলার দুঃখ” নামে আখ্যায়িত। পরবর্তীকালে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর নদী অববাহিকায় বাধ দিয়ে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে বন্যা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি দামোদর নদের অববাহিকা অঞ্চলে গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা সঞ্চয় থাকার ফলে এর উপর ভিত্তি করে দুর্গাপুর আসানসোল বার্নপুর কুলটি প্রভৃতি শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
  • উৎস : ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমিতে, পালামৌ জেলার টোরির নিকট উচ্চগিরি শৃঙ্গ।
  • দৈর্ঘ্ 529 কি.মি.
  • অববাহিকা : সর্পিল গতিতে বয়ে চলা দামোদরের 24,235 বর্গ কি.মি. বিস্তীর্ণ অববাহিকা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পালামৌ, হাজারীবাগ, কোডার্মা, গিরিডি, ধানবাদ, বোকারো, চাতরা জেলা, এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান ও হুগলী জেলার অধিকাংশ জুড়ে বিস্তৃত। এছাড়া ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, রাঁচি, লোহারডগা, ও দুমকা জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা, ও হাওড়া জেলার স্বল্প কিছু অংশও দামোদর উপত্যকার অংশ।
  • উপনদী : বরাকর নদী, কোনার নদ, উশ্রী, বোকারো নদী ইত্যাদি।

রূপনারায়ণ নদী

  • রূপনারায়ণ নদী হল দ্বারকেশ্বর নদ ও শিলাই নদীর মিলিত প্রবাহ। দ্বারকেশ্বর নদ পুরুলিয়ার ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঁকুড়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল শহরের কাছে শিলাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ নদীর জন্ম হয়; এরপর কিছুপথ প্রবাহিত হয়ে তা পুরনো দামোদর নদ বা মুণ্ডেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। এই মিলিত স্রোত এরপর হুগলি নদীতে এসে পড়ে।
  • নদীটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 80 কিলোমিটার। নদীটি ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এই নদীর তীরেই স্থাপিত হয়েছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নদীটি বর্ষার সময় বন্যার সৃষ্টি করে। তাই নদীটিতে কিছু স্থানে নদী বাঁধ গড়া হয়েছে। নদীটিকে কেন্দ্র করে জলপথে পণ্য পরিবহনের কথা ভাবছে কেন্দ্র সরকার। নদীটি বর্তমানে নাব্যতা সংকট, দূষন জলের সমস্যায় জর্জরিত।

ময়ূরাক্ষী নদী

ময়ূরাক্ষি নদী হল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি দামোদর নদ পরিকল্পনা (D.V.C) ব্যবস্থার অন্তর্গত। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য 250 কিলোমিটার।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • ময়ূরাক্ষী নদী ঝাড়খণ্ডের ত্রিকুট পাহাড় থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর পর নদীটি পূর্ববাহিনী হয়ে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর জেলা ও দুমকা জেলা অতিক্রম করে ঝাড়খন্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে বীরভূম জেলায় প্রবেশ করেছে। শেষে নদীটি মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলি নদীতে মিলিত হয়েছে। এর প্রবাহপথ জুড়ে বহু উপনদী রয়েছে। নদীটির মোট প্রবাহ পথ 250 কিমি।

অজয় নদ

  • ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের একটি বন্যাসঙ্কুল নদী যা গঙ্গার অন্যতম প্রধান শাখা ভাগীরথী হুগলির উপনদী। অজয় নামটির অর্থ যাকে জয় করা যায় না।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • বিহারের জামুই জেলা চাকাই ব্লকের বাটপার অঞ্চলের 300 মিটার উচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে এটি দেবীপুরের নিকটে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করে (দেওঘরের প্রস্তাবিত শিল্প অঞ্চল) দিয়ে গিয়ে অজয় নদ ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনের নিকট শিমজুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং এটি প্রথম পশ্চিম বর্ধমান জেলা এবং ঝাড়খণ্ড হয়ে এবং পরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া ঘাট, বীরকুলটি ঘাট, দরবারডাঙা ঘাট ও সিদ্ধপুর ঘাট হয়ে এবং বীরভূম জেলার বড়কোলা, তামড়া, বিনুই ও নবসন গ্রামের সীমানা হয়ে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম থানার নারেং গ্রামের প্রবেশ করে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথী নদীর সংগে মিলিত হয়েছে।
  • অজয় নদের মোট দৈর্ঘ্য 288 কিলোমিটার (179 মাইল) তার মধ্যে শেষ 152 কিলোমিটার (94 মাইল) পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে।

কংসাবতী বা কাঁসাই

দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান নদী। কালিদাসের মেঘদূত ও অন্যান্য সংস্কৃত সাহিত্যগ্রন্থে এই নদী কপিশা নামে উল্লিখিত। কিংবদন্তী অনুসারে, সমুদ্রের কাছে বাগদত্তা কংসাবতী কৃষ্ণ দামোদর নদের রূপে আলিঙ্গন করতে ছুটে এলে কংসাবতী দ্রুত ধাবমান হয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়। মেদিনীপুর শহর এই নদীর তীরে অবস্থিত।

উৎস ও প্রবাহপথ

  • পুরুলিয়া জেলার ঝালদা অঞ্চলে প্রায় 600 মিটার উঁচু পাহাড় ঝাবরবন কাঁসাই নালার আকারে কংসাবতী নদীর উৎপত্তি। নিকটবর্তী অযোধ্যা পাহাড় থেকে সাহারঝোরা নামে একটি ছোট নালা এরপর বেগুনকুদারের কাছে কংসাবতীতে মিশেছে। তেলদিহি গ্রামের কাছে বান্দু বা বন্ধু নদী কংসাবতীতে পড়েছে।
  • এরপর কংসাবতী পুরুলিয়া-চান্ডিল রেললাইন পেরিয়ে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে কিছুদূরে কারমারা নামার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভেদুয়া গ্রাম পার হয়ে এই নদী বাঁকুড়া জেলায় প্রবেশ করেছে। বাঁকুড়াতেই কংসাবতীর প্রধান উপনদী কুমারী নদীর সঙ্গে এর মিলন। মুকুটমণিপুরে কংসাবতী ও কুমারী নদীর মিলনস্থলে বিখ্যাত কংসাবতী বাঁধ ও জলাধারটি গড়ে উঠেছে।
  • বাঁধ ছেড়ে বেরিয়ে রায়পুরের পাশ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে মেদিনীপুর জেলার বিনপুর অঞ্চলে প্রবেশ করেছে কংসাবতী। ভৈরববাঁকী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে এরপর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করেছে এই নদী। কেশপুরের কাছে নদী দুটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। একটি শাখা দাশপুর অঞ্চলের উপর দিয়ে পালারপাই নামে প্রবাহিত হয়ে রূপনারায়ণ নদের দিকে এগিয়ে গেছে ও অপর শাখাটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে কালিয়াঘাই বা কেলেঘাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

সুবর্ণরেখা নদী

  • রাঁচির কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ঊড়িষ্যার রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঊড়িষার তালসারির কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। নদীটি রাঁচির কাছে হুডু জলপ্রপাত থেকে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খন্ডের সিঙভূম জেলা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর (পূর্ব) ঝাড়গ্রাম (বর্তমান) জেলা হয়ে ওডিশায় প্রবেশ করে। এরপর এটি বঙ্গোপসাগরে মেশে। এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য হল 395 কিমি।

দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী অথবা জোয়ার ভাটা জলে প্লাবিত নদ-নদী

জোয়ারের জলে প্লাবিত নদী বলতে সুন্দরবনের অন্তর্গত নদী এবং সামুদ্রিক খাড়ি গুলিকে বোঝায়। এরা মূলত ভাগীরথী ও হুগলি নদীর শাখানদী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা একে অপরের সাথে যুক্ত। এই নদী গুলির মধ্যে মাতলা, হাড়িয়াভাঙ্গা, পিয়ালী, ঠাকুরান, সপ্তমুখী, গোসাবা, রায়মঙ্গল, ইচ্ছামতি প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ঠাকুরণ নদ

ভারতের পূর্বদিকে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে সুন্দরবনাঞ্চলে প্রবাহিত একটি জোয়ারের জলে পুষ্ট নদী৷

উৎপত্তি ও প্রবাহ

  • নদীটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরের নিকট উৎপত্তি লাভ করেছে৷ নদীটির সাথে শাখাপথে ও খালপথে সংযোগ রয়েছে সুন্দরবনের বৃহৎ নদীগুলির অন্যতম সপ্তমুখী নদীর সাথে৷

প্রবাহপথের বর্ণনা:

  • ঠাকুরণ নদীব্যবস্থা উৎপত্তিস্থল থেকে বঙ্গোপসাগরের নিকট অধিক প্রশস্ত৷ ঠাকুরণ নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত পার্শ্বীয় শাখাগুলি হলো; কদ্রুখালি খাল, দমদমা খাল, মণি নদী, পুকছড়া, রায়দিঘী, শিবুয়া নদী, পাখিরালি খাল এবং রসের খাঁড়ি৷ আবার পূর্বতীরে অবস্থিত পার্শ্বীয় শাখাগুলি মূলত বিসর্প পথে গতিমান যেমন; বৈঁচাপি খাল, গুরা খাল, কাইকলমারি-আজমলমারি-সুইয়া নদী, দুলিভাসানী নদী এবং চুলকাটি নদী৷ প্রতিটি বিসর্পপথই জোয়ারের ফলে একে অপরের সাথে অন্তর্যুক্ত হয়ে পড়ে নদীজালিকা গঠন করে৷
  • ঠাকুরণ নদীর দুইতীরে অবস্থিত বনাঞ্চল আইনের আওতায় সংরক্ষিত৷ এগুলি মূলত লবণাম্বুজ জাতীয়৷ নদীর পূর্বতীরের অংশ সুন্দরবনের ব্যাঘ্র অভয়ারণ্য অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানে পশু ও পক্ষীবিশারদ এবং পর্যটক ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ৷
  • নদীর তীরে বেশির্ভাগ স্থানে পরিকল্পিতভাবে উঁচু নদীবাঁধ দেওয়া হলেও প্রায় সময়েই জলস্তর বৃদ্ধির কারণে নদীর দুকুল উপচে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷

পিয়ালি নদী

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন অঞ্চলের একটি জোয়ার-সম্বন্ধীয় মোহনাজ নদী। বামনঘাটার 14 কিলোমিটার বিদ্যাধরী নদী থেকে পিয়ালি নদীর উৎপত্তি। এরপর দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ক্যানিং-এর প্রায় 32 কিলোমিটার দক্ষিণে মাতলা নদীতে মিশেছে। মাতলা নদীর সঙ্গে পিয়ালি কুলতলা গাঙের মাধ্যমেও যুক্ত যেটি আবার ঠাকুরান নদীর সঙ্গে যুক্ত।

মাতলা নদী

  • পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি প্রবাহ পথে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি প্রবাহ কুলতলি গরানবোস হয়ে সুন্দরবন গেছে অন্য প্রবাহটি বাসন্তি, পাঠানখালি, সূর্যবেড়িয়া হয়ে বিদ্যাধরী নদীতে মিলিত হয়েছে।
  • বর্ষার সময় মাতলা নদীতে জল প্রবাহ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় ফলে নদীটিতে নৌকা বা লঞ্চ চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে আবার শুষ্ক মরশুমে নদীটিতে জলের প্রবাহ কমে যায় ফলে নৌকা বা লঞ্চ নদীর তীরের জেটিতে আসতে পারেনা। বর্ষার সময় নদীটি দুই তীরে প্লাবিত করে বন্যা সৃষ্ট করে। তাই মাতলা নদীর পাড় বরাবর আশেপাশের অঞ্চলের গ্রামগুলিকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
  • ক্যানিং শহরে মাতলা নদীর উপর 644 মিটার (2,113 ফুট) দীর্ঘ একটি সেতু উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য 2011 সালের জানুায়ারি মাসে। সেতুটি মাতলা সেতু নামে পরিচিত।

গোসাবা নদী

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবন এলাকার একটি উপকূলবর্তী নদী। এই নদী সমুদ্রের জোয়ারের জলে পুষ্ট তাই এ নদীর জল লবণাক্ত। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত। এই নদী মাতলা ও রায়মঙ্গল নদীর মিলনের ফলে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি উৎপন্ন হয়ে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

সপ্তমুখী নদী

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবন এলাকার একটি উপকূলবর্তী নদী। এই নদী জোয়ারের জলে পুষ্ট। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুলতানপুরে উৎপন্ন হয়েছে। এর পর নদীটি কুলপি ও মথুরাপুর ব্লকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিহ হয়েছে। প্রবাহ পথে নদীটি মুড়িগঙ্গা নদী ও দেওগ্রা খালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। নদীটির মোট প্রবাহ পথের দৈর্ঘ্য হল 80 কিলোমিটার।

রায়মঙ্গল নদী

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য 62 কিলোমিটার, গড় প্রস্থ 2,265 মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
  • রায়মঙ্গল নদীটি সুন্দরবনের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের কাছে ইছামতি নদী কয়েকটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঝিলা নদী, কালিন্দী নদী এবং যমুনা নদী। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে এই নদীগুলো প্রশাখা বিস্তার করেছে। নদীটি সুন্দরবনের অভ্যন্তরস্থ নৌচলাচল পথ হিসেবে নদীটি ব্যবহৃত হয়। নদীটি উপকূলীয় জোয়ার ভাঁটার নদী।

বিদ্যাধরী নদী

  • পশ্চিমবঙ্গের একটি নদী। এই নদীর উৎসস্থল নদিয়া জেলার হরিণঘাটা। এরপর বিদ্যাধরী উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসত, দেগঙ্গা ও হাবরা এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুন্দরবনে রায়মঙ্গল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বিদ্যাধরী নদী প্রাচীন বঙ্গীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান নদীপথ ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এই নদীর তীরেই চন্দ্রকেতুগড় নদীবন্দরটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে এই নদী উত্তর চব্বিশ পরগনা ও কলকাতার অন্যতম প্রধান নিকাশি মাধ্যম।
  • সুন্দরবন এলাকায় পরস্পরসংযুক্ত একাধিক জলপথের জটিল আবর্তের দেখা যায়। এই অঞ্চলের বৃহৎ নদীগুলি অনেক ক্ষেত্রেই এক মাইল চওড়া ও দক্ষিণবাহী। বিদ্যাধরী নদীও অনুরূপ একটি নদী। গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এবং সপ্তদশ শতাব্দীর পর থেকে হুগলি নদীর পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে এই নদীতে মিষ্টি জলের পরিমাণ অল্পই।

কালিন্দী নদী

  • সুন্দরবনের কাছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের কাছে ইছামতি নদী কয়েকটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঝিলা নদী, কালিন্দী নদী এবং যমুনা নদী। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে এই নদীগুলো প্রশাখা বিস্তার করেছে।

সুন্দরবন অঞ্চলের নদী গুলির বৈশিষ্ট্য

  • সামুদ্রিক জোয়ারে নদী গুলি প্লাবিত হওয়ায় জোয়ারের সময় নদী গুলিতে নৌকা চলাচল করলেও ভাটার সময় নদীগুলি নৌপরিবহনে অযোগ্য।
  • সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় নদীগুলির জল লবণাক্ত হয়ে পড়েছে।
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নদীগুলি সামুদ্রিক খাড়িতে পর্যবসিত হয়েছে।
  • নদীখাত গুলি দীর্ঘদিনের পলি সঞ্চায়ে ভরাট হয়ে পড়েছে তাই নদীগুলি অত্যন্ত অগভীর এবং অনেক সময় নদীগুলি তাদের মূল প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
  • সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার ফলে মৎস্য শিকারে নদীগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি এই নদীগুলি স্থানীয় জীবনযাত্রা প্রণালীকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।

Check Also
ADDA247 Bengali Homepage Click Here
ADDA247 Bengali Study Material Click Here

 

Adda247 ইউটিউব চ্যানেল – Adda247 You Tube Channel

Adda247 টেলিগ্রাম চ্যানেল – Adda247 Telegram Channel

FAQs

পশ্চিমবঙ্গের দুঃখ কোন নদকে বলা হয়?

দামোদর নদকে পশ্চিমবঙ্গের দুঃখ বলা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম নদী কোনটি?

দামোদর পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম নদী।

baisakhidey

ADDAPEDIA West Bengal-Daily Current Affairs 30th April 2024, Download English And Bengali PDF

ADDAPEDIA West Bengal- Daily Current Affairs ADDAPEDIA West Bengal- Daily Current Affairs: Current affairs are…

4 hours ago

WBPSC Clerkship Selection Process 2024, Check Details Here

WBPSC Clerkship Selection Process: ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশন(WBPSC), WBPSC Clerkship পরীক্ষাটি পরিচালনা করে। এই…

6 hours ago

WBP Study Plan: Complete Study Guide For The WBP Upcoming Exams

WBP Study Plan WBP Study Plan: ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিস কমিশন(WBPRB), WBP কনস্টেবল, কলকাতা পুলিশ…

6 hours ago

NVS নিয়োগ 2024, 1377 টি নন-টিচিং পোস্টের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ 7ই মে পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে

NVS নিয়োগ 2024: নবোদয় বিদ্যালয় সমিতি (NVS) বিভিন্ন ধরনের নন টিচিং পদে নিয়োগের জন্য অফিসিয়াল…

10 hours ago

উচ্চমাধ্যমিক পাশেই কেন্দ্র সরকারের চাকরির সুযোগ, বিস্তারিত জানুন

উচ্চমাধ্যমিক পাশেই কেন্দ্রসরকারের চাকরি, বিস্তারিত জানুন উচ্চমাধ্যমিক পাশেই কেন্দ্রসরকারের চাকরির সুযোগ রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ শিক্ষার্থীরা…

10 hours ago

সাপ্তাহিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স PDF ডাউনলোড করুন, 22শে এপ্রিল-27শে এপ্রিল 2024

সাপ্তাহিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সাপ্তাহিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 22শে এপ্রিল থেকে 27শে এপ্রিল 2024-এর জন্য Adda247 থেকে…

12 hours ago