Bengali govt jobs   »   Article   »   River System Of West Bengal

River System Of West Bengal, Riverside Town In West Bengal-(Geography Notes)

Table of Contents

River System Of West Bengal

River System of West Bengal: পশ্চিমবঙ্গ একটি নদীমাতৃক রাজ্য । পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ নদ-নদী উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে অথবা পশ্চিমের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়ে এই রাজ্যের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বয়ে গিয়েছে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে সৃষ্ট নদ-নদীগুলি বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে সারা বছর জল থাকে। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট নদ-নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট বলে বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় বিশেষ করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে জল খুব কমে যায় অথবা একদমই জল থাকেনা। পশ্চিমবঙ্গের ভূমিরূপের অবস্থান অনুযায়ী গঙ্গা, ইছামতি, রূপনারায়ণ ইত্যাদি নদ-নদীগুলোত জোয়ার-ভাটা খেলে অর্থাৎ জোয়ারের সময় বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত জল হলেও সারা বছর জলের জোগান থাকে। অন্যদিকে রাঢ় অঞ্চলের কংসাবতীর মতো নদীগুলোর অবস্থান উঁচু থাকায় জোয়ারের জল ঢোকেনা। ফলে সারা বছর বর্ষা ভালো হলে জল থাকে, আর না-হলে নদীবক্ষ শুকিয়ে যায়।

উৎপত্তি ও গতিপ্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:

  • উত্তরবঙ্গের নদনদী অথবা বরফ গলা জলে পুষ্ট নদ-নদী
  • মধ্যভাগে গঙ্গা ও তার বিভিন্ন শাখানদী
  • পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদী অথবা বর্ষণ পুষ্ট নদ-নদী
  • দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী অথবা জোয়ার ভাটা জলে প্লাবিত নদ-নদী

উত্তরবঙ্গের নদনদী অথবা বরফ গলা জলে পুষ্ট নদ-নদী :-

উত্তরবঙ্গ উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতের হিমবাহ থেকে যে সকল নদী গুলি সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিস্তা, মহানন্দা, বালাসন, জলঢাকা, তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, সংকোশ প্রভৃতি।

তিস্তা নদী (Teesta river)

উৎস(Source)

  •  প্রকৃতপক্ষে নদীটির বাংলা নাম তিস্তা এসেছে ত্রিস্রোতা বা তিন প্রবাহ থেকে। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখা বলা হয়। সিকিম হিমালয়ের ৭,২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি দার্জিলিং -এ অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরিসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা একটি বন্য নদী এবং এর উপত্যকা ঘনবনে আচ্ছাদিত। পার্বত্য এলাকায় এর নিষ্পাশন এলাকার পরিমাণ মাত্র ১২,৫০০ বর্গ কিলোমিটার। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে প্রবাহটি দার্জিলিং সমভূমিতে নেমে আসে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করে। নদীটি নিলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

 প্রবাহপথ (Flow path)

  • তিস্তা নদীর উৎস উত্তর সিকিমের হিমালয় পর্বতমালার ৫,৩৩০ মিটার (১৭,৪৮৭ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত সো লামো হ্রদে। হ্রদটি শেসচেনের কাছে ডোংখা গিরিপথের উত্তরে অবস্থিত।
  • তিস্তা নদী ছাঙ্গু, ইউমথাং ও ডোংকিয়া লা পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপন্ন ছোট ছোট নদীর জলে পুষ্ট। সিকিমের রংপো ও পশ্চিমবঙ্গের তিস্তাবাজার শহরের মাঝের অংশে তিস্তাই উভয় রাজ্যের সীমানা নির্দেশ করছে। তিস্তা সেতুর (যে সেতুটি দার্জিলিং ও কালিম্পং শহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে) ঠিক আগে তিস্তা তার প্রধান উপনদী রঙ্গিতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এখান থেকে তিস্তার গতি দক্ষিণমুখী। শিলিগুড়ি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সেবকের করোনেশন সেতু পেরিয়ে তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তারপর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা মিশেছে ব্রহ্মপুত্রে।

জলঢাকা নদী (Jaldhaka river)

  • একটি আন্তঃসীমান্ত নদী । ১৯২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটি দক্ষিণ-পূর্ব সিকিম-এ হিমালয় পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে ভুটান হয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা অতিক্রম করে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে । প্রবেশের পর ধরলা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ধরলা নামেই কুড়িগ্রামের কাছে ব্রহ্মপুত্রে মিশেছে ।

রায়ডাক নদী (ভুটানে নাম ওয়াং ছু বা ওং ছু) | Raidak River (Bhutanese name Wang Chu or Wong Chu)

  • এটি হল ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী। এটি একটি আন্তর্জাতিক নদী। এটি ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

উৎস ও প্রবাহপথ ( Source and Flow Path):

  • ওয়াং ছু বা রায়ডাক নদীর উৎস হিমালয় পর্বতমালা। উচ্চগতিতে এই নদী থিম্পু ছু নামে পরিচিত। মূল নদীটি খরস্রোতা। প্রস্তরময় নদীপথে এটির গতি। থিম্পু ও পারো ছু নদীর মোহনার মধ্যে এই নদীর গতিপথ অত্যন্ত সংকীর্ণ। কিন্তু তারপর এই পথ বিস্তার লাভ করেছে। সেখানে এটি অত্যন্ত খাড়াই ঢালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর এটি দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে একটি তুলনামূলকভাবে মুক্ত উপত্যকায় পড়েছে। কাছাকাছি পার্বত্য অঞ্চল থেকে একাধিক ছোটো নদী এসে এই নদীতে মিশেছ। পারো জংয়ের উজানে এই নদীর অন্যতম প্রধান উপনদী টা ছু এতে এসে বাম দিকে মিশেছে। পশ্চিম দিকে এই নদীর সঙ্গে মিশেছে হা ছু। তাশিছো জংয়ে নদীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,১২১ মিটার (৬,৯৫৯ ফুট) উঁচুতে। কিন্তু যেখানে এই নদী ডুয়ার্সে প্রবেশ করছে সেখানে এই উচ্চতা মাত্র ৯০ মিটার (৩০০ ফুট)।
  • পশ্চিমবঙ্গের আলুপুরদুয়ার জেলায় ডুয়ার্সে প্রবেশ করার পর এই নদী কোচবিহার জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় রায়ডাক ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। এই অঞ্চলে এই নদীর নাম দুধকুমার নদী।
  • রায়ডাক নদীর গতিপথের একক দৈর্ঘ্য ৩৭০ কিলোমিটার। তবে শাখা নদীগুলি নিয়ে শুধুমাত্র ভুটানেই এই নদীর দৈর্ঘ্য ৬১০ কিলোমিটার।

তোর্ষা নদী (Torsha river)

তোর্ষা (তোর্সা) বা চুম্বি বা আমোছু নদী এশিয়ার একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। তিব্বত, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নদীটি প্রবাহিত।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path):

  • পূর্ব তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার টাং-পাস থেকে উত্থিত হয়ে ভুটানের পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে নদীটি দক্ষিণে নেমেছে। নদীটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। উজানের স্রোতধারা চুম্বি নামেও অভিহিত হয়। ভুটানে এর নাম আমোছু। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় এবং বাংলাদেশে এই নদীর নাম তোরষা। তোরষা অর্থ তোয় রোষা অর্থাৎ রুষ্ট জলপ্রবাহ। সত্যিই তোরষা খ্যাপাটে স্বভাবের এক দুর্দান্ত নদী।
  • তোরষা নদী কুচবিহার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ধুবড়ির প্রায় ২২.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে। কুচবিহারের পশ্চিমে ধরলা নামে এ নদীর দক্ষিণ দিকস্থ একটি শাখা জলঢাকা নদীতে পড়েছে। কুচবিহারের প্রায় ২৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রায়ডাক নদীর একটি শাখা তোরষা নদীতে মিশেছে এবং মিলনস্থলের ভাটিতে তোরষা নদীকে রায়ডাক বা দুধকুমার বলে।

মহানন্দা নদী (Mahananda river)

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৬০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৬০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • এর উৎপত্তিস্থল হিমালয় পর্বতের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলার অংশে। দার্জিলিং জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা দিয়ে প্রবেশ করে।
  • এর পর তেতুলিয়া পুরাতন বাজার দিয়ে আবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করে, পরে মালদা জেলা হয়ে আবার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের কাছে প্রবেশ করে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়। বৃষ্টির জল এই নদীর প্রবাহের প্রধান উৎস। ফলে গরম কাল ও শীতকালে নদীর পানি কমে যায়, আর বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কুল ছাপিয়ে বন্যা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর অংশটির দৈর্ঘ্য ৩৬ কিমি।

উপনদী(Tributaries) :

  • পুনর্ভবা,
  • নাগর,
  • টাংগন,
  • কুলিক।

পুনর্ভবা নদী (Punarbhaba river)

  • পুনর্ভবা বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২২৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১০২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path):

  • পুনর্ভবা নদী উত্তরবঙ্গে প্রবাহিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটির বর্তমান উৎপত্তিস্থল হচ্ছে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের বিলাঞ্চল। পতিত হয়েছে মহানন্দা নদীতে।
  • দিনাজপুর শহর এ নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। বর্তমানে মৃত ঘাঘরা, গাবুরা, কাঁচাই প্রভৃতি নদী এক সময় পুনর্ভবারই উপনদী ছিল। নদীর গতিপথ উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। আত্রাই থেকে কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে পুনর্ভবার উচ্চতর গতিপথ। দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হওয়ার পর পুনর্ভবা ঢেপা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে, যা করতোয়া নদীর একটি শাখা নদী। দিনাজপুর শহরের ঠিক দক্ষিণে নদীটি পশ্চিম এবং পশ্চিম-কেন্দ্রীয় বরেন্দ্রভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর নদীবিস্তৃত ভূমির প্রশস্ততা ৩ থেকে ৮ কিলোমিটার। চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার রহনপুরের ঠিক দক্ষিণ দিকটি মহানন্দা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। টাঙ্গন নদীর রয়েছে একটি সুরক্ষিত নদীবিস্তৃত ভৃমি, যা পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত। কুলিক নদীর তীরবর্তী ভৃমি লক্ষণীয়ভাবে তরঙ্গায়িত। নাগর নদী দিনাজপুর জেলার পশ্চিম সীমানার বহু কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি পুনরায় ভোলাহাটের কাছে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন হয়ে প্রবাহিত হয়েছে ; অতঃপর নবাবগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে নবাবগঞ্জ শহরের দক্ষিণে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। নদীটি জোয়ার ভাটা প্রভাবিত নয়।

টাঙ্গন নদী (Tangan river)

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path):

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকে উৎপন্ন হয়ে এটি বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, রুহিয়া, এবং বোচাগঞ্জ, এবং দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলা দিয়ে পুনরায় পশ্চিমবঙ্গের দিকে চলে যায়। এই নদী পুনরায় গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং পুনর্ভবা নদীর সাথে মিলিত হয়। শীতকালে এই নদীর জল কমে গেলেও বর্ষাকালে নৌ যোগাযোগের উপযুক্ত হয়। ঠাকুরগাঁও শহর টাংগন নদীর তীরে অবস্থিত।

নাগর নদী বা নাগর আপার নদী (Nagar River or Nagar Upper River)

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও জেলার একটি নদী।

কুলিক নদী (Kulik river)

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তরাংশের ঠাকুরগাঁও উপজেলা ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বিল এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের হরিপুর উপজেলার বাংলাদেশ অংশে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রবাহপথে বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকাইল ও হরিপুর উপজেলা রয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশে ৬.৩৬ কিমি এবং ভারতের অংশে ৭৫.৬৪ কিমি।

ফুলহার নদ (Fulhar River)

ফুলহার নদ ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে প্রবাহিত একটি আন্তর্রাজ্যীয় নদী।

উৎস ও প্রবাহপথ (Source and Flow Path):

ফুলহার নদ কিশানগঞ্জের লখিমারার কাছে মহানন্দা নদী থেকে আলাদা হয়ে, বিহারের কাটিহার হয়ে মালদা জেলাতে প্রবেশ করে ভুতনির কাছে গঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদের গভীরতা কম হওয়াই বর্ষাকালে প্রচুর বন্যা হয়।

২০১৪-এর বন্যা:

ফুলহার নদে ২০১৪ সালে প্রচুর বন্যা হয় ও মহানন্দা বাঁধ ভেঙে যায়, যার ফলে মালদা জেলার বিভিন্ন এলাকা বিপদগ্রস্ত হয়।

সংকোশ নদী (Sankosh River)

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path):

  • সংকোশ ( গদাধার মো চু এবং সবর্ণকোশ নামেও পরিচিত) উত্তর ভুটানে থেকে উত্থিত একটি নদী এবং নদীটি ভারতের আসাম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়। ভুটানে এটি ওয়াংডু ফোড্রং শহরের নিকটে কয়েকটি উপনদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পুনা সাং চু নামে পরিচিত হয়। নদীটির দুই বৃহত্তম উপনদী হল মো চু এবং ফো চু, যা একসাথে প্রবাহিত হয় পুনাখ নামে। পুনাখ দজং, যা দুটি নদীর মিলন স্থলে অবস্থিত। এটি ভুটানের সবচেয়ে সুন্দর দজং এবং দ্রাতশং লেনশগগের শীতকালীন আবাসস্থল। ফো ছু নদীর উপরিভাগে বরফ অবরোধের সম্ভাবনা বেশি এবং হিমবাহ হ্রদ বিস্ফোরণ বন্যা দ্বারা বেশ কয়েকবার দজং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতে প্রবেশ করার পর এটি পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের সীমান্তে প্রবাহিত হয়। ওয়াংডু ফোড্রং-এ ১,৩৬৪ মিটার (৪,৪৭৫ ফু) উচ্চতায় নদীটিতে পশ্চিম দিক থেকে তান চু মিলিত হয় এবং এটি একটি গিরিখাতের প্রবেশ করে। ওয়াংডু ফোড্রং থেকে দাগানা পর্যন্ত দক্ষিণে মহাসড়কটি নদী প্রবাহকে অনুসরণ করে। তাকশাইয়ের কাছে পশ্চিম দিক থেকে নদীতে হারা ছু মিলিত হয়। ভুটানে এই নদীর শেষ বৃহৎ উপনদী হল দাগ ছু।

ডুডুয়া নদী (Dudua River)

  • ডুডুয়া নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার একটি নদী। ডুডুয়া নদী জলঢাকা নদীতে পতিত হয়েছে।

ডাহুক নদী (Dahuk River)

  • ডাহুক নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর ও জলপাইগুড়ি জেলার এবং বিহারের কিশানগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫০ কিলোমিটার (আনুমানিক), গড় প্রস্থ ৮০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

উৎস ও প্রবাহপথ(Flow Path and Source)

  • ডাহুক নদী জলপাইগুড়ি এলাকা থেকে এসে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার রওশনপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মাত্র ১০ কিলোমিটার প্রবাহিত হবার পর মাঝিপাড়া ক্যাম্পের দক্ষিণ দিক দিয়ে পুনরায় ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে প্রবেশ করেছে। এরপর উত্তর দিনাজপুর থেকে বিহারের কিশনগঞ্জ জেলায় মহানন্দা নদীতে মিশে গেছে।

ধরলা নদী (Dharla River)

  • ধরলা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • উৎপত্তিস্থল হিমালয়ে জলঢাকা বা শিংগিমারি নামে পরিচিত নদীটি পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রবেশের পর নদীটি পাটগ্রাম থানার কাছে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং অকস্মাৎ বাঁক নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ-ভারতের এই আন্তঃসীমান্ত নদীটি জলঢাকা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মুলত ধরলা নামেই কুড়িগ্রামের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে।

রাম্মাম নদী (Rammam River)

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path):

  • রাম্মাম নদী হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলায় প্রবাহিত একটি জল প্রবাহিকা। এই নদীটি সিঙ্গালিলা পর্বত শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে দার্জিলিং শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রঙ্গীত নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র (Hydropower Station):

  • রাম্মাম নদীর উপর রাম্মাম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করে উঠেছে। বর্তমানে এই নদীর উপর রাম্মাম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র-৩ গঠন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রটি থেকে ৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

রঙ্গীত নদী (Rongit River)

  • সিকিমের দক্ষিণ অংশ এবং কালিম্পং-এ প্রবাহিত একটি নদী। এটি তিস্তা নদীর একটি শাখানদী। রঙ্গীত নদী পশ্চিম সিক্কিম জেলার হিমালয় অংশে উৎপত্তি লাভ করেছে। নদীটি জোরেথাং, পেল্লিং এবং লেগশিপ শহরগুলোর নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শেষের কয়েক কিলোমিটারে এটি তিস্তার সাথে মিশেছে, যাকে ত্রিবেণী বলা হয়, এবং ত্রিবেণী একটি জনপ্রিয় বনভোজনের জায়গা।

বালাসন নদী (Balasan River)

  • পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির একটি৷ বালাসন নদী দার্জিলিং জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে সুকিয়া জোড়পোখরি অঞ্চল থেকে সৃষ্ট হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তরবঙ্গ সমভূমিতে শিলিগুড়ি শহরের দক্ষিণপ্রান্তে মহানন্দা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে৷ নদীটি পোখরিবঙ উপত্যকা, ধোত্রেইয়া, আম্বোটিয়া, বালাসন, নাগরি, মুন্ডাকোটি প্রভৃতি চাবাগান ও সোনাদা টাউন ও শিলিগুড়ি শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত৷ এর দক্ষিণপাড়ে জোড়পোখরি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যটি অবস্থিত৷
  • বালাসন নদীর তীরবর্তী আদা, দারুচিনি, কমলালেবু সহ আরো বিভিন্ন স্থানীয় মশলার চাষ ভালো হয়৷

করতোয়া নদী (Karatoya River)

  • করতোয়া নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

বর্তমান প্রবাহ :

  • করতোয়া নদী বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলার ভোজনপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং দিনাজপুর সদর উপজেলার সরকারপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছে।

চাওয়াই নদী (Chawai River)

  • চাওয়াই নদী বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

ঘোড়ামারা নদী (Ghoramara River)

  • ঘোড়ামারা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশে ১৩ কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ১০০ মিটার যা ঘোড়ামারা ঘাটে পরিমাপকৃত। এবং এখানে নদীর গভীরতা ৪ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন ৬৫ বর্গকিলোমিটার।

উৎস ও প্রবাহপথ (Source and Flow Path):

  • ঘোড়ামারা নদী ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা হতে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং সেই জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীতে পতিত হয়েছে।
  • এই নদীর জলপ্রবাহ সারা বছরই থাকে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে জলপ্রবাহ সবচেয়ে কমে যায়। তখন প্রবাহের পরিমাপ ২.৪৫ ঘনমিটার/সেকেন্ড হয়। জুন-জুলাই মাসে জলপ্রবাহ বেশি হয়। তখন এই প্রবাহ ৪৯৪ ঘনমিটার/সেকেন্ড হয়। এই নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব নেই। নদীটির উপর একটি ঘোড়ামারা নামক সেতু আছে ।

আত্রাই নদী (Atrai River)

  • ভারতের-বাংলাদেশ একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ২৬৯ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশের দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৭৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • আত্রাই নদীটি পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীটির সর্বমোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪০ মাইল (৩৯০ কিলোমিটার)। এটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৯৯ ফুট (৩০ মিটার)। অতীতে এই নদীকে আত্রেই নামে ডাকা হতো এবং মহাভারতে এটির উল্লেখ রয়েছে। করতোয়া নদীর সাথে এটির সংযোগ রয়েছে।
  • এটির উৎপত্তি পশ্চিম বাংলায় এবং এটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করেছে। এটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ এবং বালুরঘাট ব্লকের মধ্যে দিয়ে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দিনাজপুর জেলায় নদীটি গবুরা এবং কঙ্করা নামে দুটি নদীতে বিভক্ত হয়েছে। এটা বরেন্দ্র ভূমি অতিক্রম করে এবং চলন বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীটি বারো মাসই মাছ ধরার জন্য উপযোগী থাকে। যদিও বর্ষাকালে নদীটি প্রায়ই অনেক অঞ্চলে বন্যা ঘটিয়ে থাকে।

উত্তরবঙ্গের নদী গুলির বৈশিষ্ট্য :-

  • নদীগুলি হিমবাহের বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে এরা নিত্যবহ।
  • নদীগুলি পার্বত্য হইতে উৎপত্তি লাভ করে খাড়া সমভূমি তে পতিত হওয়ায় নদীর প্রসস্থ এবং অগভীর, তাই বর্ষার অতিরিক্ত জলে নদীগুলি প্লাবিত হয়ে প্রতিবছর বন্যা সৃষ্টি হয়।
  • সমভূমি অঞ্চলে নদীগুলি প্রতিনিয়ত নিজেদের গতিপথ পরিবর্তন করে।
  •  নদীগুলি খরস্রোতা বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ।
  • পার্বত্য প্রবাহে নদীগুলি সুগভীর গিরিখাত গঠন করে নেমে এসেছে।
  •  নদীগুলির পার্বত্য প্রবাহে একাধিক জলপ্রপাত দেখা যায়।

মধ্যভাগে গঙ্গা তার বিভিন্ন উপনদী :-

 গঙ্গা নদী (Ganges river)

  • পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ নদী হল গঙ্গা। এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৫২৫ কিমি যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৫২০ কিমি দৈর্ঘ্য নিয়ে এই নদী প্রবাহিত হয়।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • কুমায়ুন হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে উত্তরপ্রদেশ এবং পরে বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের নিকট গঙ্গা নদী পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান এর নিকট দুই ভাগে ভাগ হয়ে প্রধান শাখাটি পদ্মা নাম নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, অপর শাখাটি ভাগীরথী- হুগলি নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী–হুগলী নদীই গঙ্গা নামে পরিচিত । মুর্শিদাবাদ থেকে নবদ্বীপ শহর পর্যন্ত এই নদীর নাম ভাগীরথী এবং নবদ্বীপ থেকে মোহানা পর্যন্ত এই নদীর নাম হুগলী নদী।  এই নদীর তীরে কলকাতা নগরীর পত্তন হয়। পরবর্তীকালে এই নদীর তীরে হুগলি শিল্পাঞ্চল বিকাশ লাভ করে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কৃষি, জলসেচ, ব্যবসা বাণিজ্য, নৌপরিবহন, সংস্কৃতি ও পর্যটনে এই নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে ।

জলঙ্গী নদী (Jalangi river)

  • ভারত-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা ও নদিয়া জেলা দিয়ে প্রবাহিত। অতীতে এর নাম ছিল খড়ে নদী। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ২২০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। বর্তমানে নদীটিতে পলি জমে যাওয়ায় এটি তার গভীরতা হারিয়েছে।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • জলঙ্গী নদী মুর্শিদাবাদ জেলায় চর মধবোনার কাছে পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। উৎস স্থল থেকে দক্ষিণে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহ পথে নদীটি ইসলামপুর, ডোমকল, তেহট্ট, পলাশীপাড়া, চাপড়া অতিক্রম করে কৃষ্ণনগরের কাছে এসে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়েছে। এর পর নদীটি পশ্চিমমুখী হয়ে মায়াপুরের কাছে স্বরূপগঞ্জে গঙ্গা বা ভাগীরথী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই প্রবাহ পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২০ কিলোমিটার। নদীটির প্রবাহ পথে প্রচুর নদী বাঁক ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়। ভৈরব নদী এই নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং এই নদীটিই জলঙ্গী নদীর বেশির ভাগ জলের যোগান দেয়। বর্ষার মরশুম ছাড়া গ্রীষ্মের মরশুমে নদীটির জল অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

মাথাভাঙ্গা নদী (Mathabhanga River)

উৎস ও প্রবাহপথ(Flow Path and Source) :

  • মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গির উৎস থেকে আনুমানিক ১৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী হতে।
  • মাথাভাঙ্গা নদীটি উৎপত্তিস্থল থেকে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার হাওলি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ইছামতি-কালিন্দী নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৯ মিটার এবং দর্শনার নিকট গভীরতা ১০ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন ৫০০ বর্গকিলোমিটার। সাধারণত এই নদীর তীর উপচে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বন্যা হয় না।

ইছামতি নদী বা ইচ্ছামতি বা ইছামতি-কালিন্দি নদী (Ichhamati River or Ichchamati or Ichhamati-Kalindi River)

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ৩৭০ মিটার।
  • ইছামতি নদীটির এখন তিনটি অংশ রয়েছে – (১) দীর্ঘতর অংশটি পদ্মা নদীর একটি শাখানদী মাথাভাঙ্গা নদী থেকে প্রবাহিত হয় এবং ২০৮ কিমি প্রবাহিত হবার পর উত্তর ২৪ পরগণা জেলা‎র হাসনাবাদের কাছে এবং সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার কাছে কালিন্দী নদীর সাথে যুক্ত হয়। (২) একসময়ের পশ্চিম ঢাকার প্রধান নদী এবং (৩) দিনাজপুরের ইছামতি। ১৭৬৪-৬৬ সালের রেনেলের মানচিত্র অনুসারে শেষোক্ত নদী দুইটি একীভূত দেখা যায়। বেশকিছু জলানুসন্ধানবিদদের মতে, প্রাচীনকালে তিনটি ইছামতি নদীই অভিন্ন ছিল।

চূর্ণী নদী (Churni River)

  • ভারতের নদীয়া জেলার মাজদিয়া মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এর পর নদীটি ৫৬ কিমি প্রবাহিত হয়ে চাকদহর কাছে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। কুস্টিয়া জেলায় পদ্মা নদী থেকে মাথাভাঙ্গা নদী উৎপন্ন হয়ে নদীয়া জেলার মাজদিয়াতে নদীটি দুটি প্রবাহে ভাগ হয়। একটি শাখা ইছামতি নদী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে অন্যটি চুর্নী নামে দক্ষিণ-পশ্চিমে বাহিত হয়েছে। চুর্নী নদীটি মাজদিয়া, শিবনিবাস, হাঁসখালি, বীরনগর, আরংঘাটা, রানাঘাট, চাকদহ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির প্রবাহ পথে কিছু নদী চর বা দ্বীপ দেখা যায়। বর্তমানে নাব্যতা হারিয়েছে অতীতের বিখ্যাত নদী চূর্নী।

হুগলি নদী বা ভাগীরথী-হুগলী (Hooghly river or Bhagirathi-Hooghly)

  • পশ্চিমবঙ্গে নদীর একটি শাখানদী। পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা বাঁধ থেকে একটি খালের আকারে নদীটি উৎসারিত হয়েছে। হুগলি জেলার হুগলি-চুঁচুড়া শহরটি (পূর্বনাম হুগলি) এই নদীর তীরে অবস্থিত।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • গঙ্গার ২৫২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের ৫২০ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত। রাজমহল পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিমে তেলিগড় ও সকরিগলির সংকীর্ণ গিরিপথটি ঘেঁষে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমায় গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। এরপর ধুলিয়ান শহরের নিকটে এটি ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। ভাগীরথীর প্রবাহ মুর্শিদাবাদ জেলাকে দুটি ভৌগোলিক অংশে বিভক্ত করেছে – বাগড়ি (পূর্বভাগে) ও রাঢ় (পশ্চিমভাগে)। এরপর নবদ্বীপ পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী ও নবদ্বীপ থেকে গঙ্গাসাগর অবধি এই নদী হুগলি নামে প্রবাহিত। নবদ্বীপের আরও দক্ষিণে হুগলি জেলা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা। এই নদী হালিশহর, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, কামারহাটী শহরগুলির পাশদিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপর কলকাতা (কলকাতা) এবং হাওড়া এর দ্বৈত শহর প্রবেশ করার আগে, এটি দক্ষিণ-পশ্চিমে নদীটি নূরপুরে গঙ্গার একটি পুরানো প্রবাহে প্রবেশ করে এবং নদীটি সাগরদ্বীপের দক্ষিণ পান্তে গঙ্গাসাগরের মোহনায় প্রায় ২০ মাইল (৩২ কিলোমিটার) চওড়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়।
  • এর দুটি প্রধান উপনদী হল দামোদর ও রূপনারায়ণ। কলকাতা শহর ও মহানগর হুগলির তীরেই অবস্থিত। হুগলি নদীর গড় গভীরতা ২০০ ফুট এবং সর্বচ্চো গভীরতা ৩৮১ ফুট।

জলোচ্ছ্বাস:

  • সমুদ্র থেকে জোয়ার হুগলি নদীতে দ্রুত চালিত হয় এবং একটি “বৃহ্ৎ জলোচ্ছ্বাস” বা বান হিসাবে পরিচিত জলের দেয়াল বা জলের তরঙ্গের একটি অসাধারণ উদাহরণ তৈরি করে। এটি জোয়ারে অগ্রভাগের-তরঙ্গের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে নদীতে আকস্মিকভাবে গঠিত হয় হয় এবং প্রায় ৭ ফিট (২.১ মিটার) উচ্চতা অতিক্রম করে। এটি কলকাতা শহরের কাছে অনেক বেশি উচ্চতায় অনুভূত হয়, এবং প্রায়ই ছোট নৌকা ও জাহাজ ধ্বংস করে। শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাতের কম জলের সর্বনিম্ন পয়েন্ট থেকে উচ্চমাত্রার বৃষ্টিপাতের সময়ের উচ্চতম জলের পার্থক্যটি জানা যায় যে ২০ ফিট ১০ সেন্ট (৬.৩৫ মিটার)। মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসে জোয়ারের সবচেয়ে বড় উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটে -প্রায় ১৬ ফুট (৪.৯ মিটার)। এছাড়া সাধারনত বর্ষার সময় ১০ ফুট (৩.০ মিটার) এবং অন্য সময়ে জোয়ারের ফলে ৩ ফুট (১.০৭ মিটার) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ঘটে হুগলি নদীতে।

চৈতা নদী (Chaita River)

  • ইছামতি নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে গাইঘাটায় যমুনা নদীতে মিলিত হয়ছে। নদীর দৈর্ঘ্য ৪০ কিমি। নদীটি বর্তমানে উৎস মুখে ইছামতি নদী থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে এছাড়া নদীটিতে পলি জমে নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। চৈতা নদীর কিছু স্থানে নদী গর্ভে চাষাবাদ চলছে এবং নদীর পাড় ভেঙ্গে, গতিপথ রুদ্ধ করে মাছের ভেড়ি নির্মাণ ও মাছ চাষ হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে নদী গর্ভে গবাদিপশুর খাবার প্রচুর পাওয়া যায়। এই নদী খোঁড়ার সময় কিনারমাঠ গ্রামে কুমীর এর চোয়াল পাওয়া গেছে।এই নদীটির সঙ্গে গাইঘাটা এলাকার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চালুন্দিয়া নদী যুক্ত রয়েছে।
  • চৈতা নদীটি গঙ্গা নদী ব্যবস্থার অন্তর্গত। নদীটি মোট ৪০ কিলোমিটার অতিক্রম করে গাইঘাটায় যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীটি প্রবাহ পথে গোপালনগর, টালিখোলা, ক্ষেদাইতলা, চৈতাপাড়া,খড়ুয়া রাজাপুর, কিনারমাঠ, রামপুর প্রভৃতি গ্রাম অতিক্রম করেছে। এই সমস্ত গ্রামের নদীর তীরবর্তী জমির কৃষি কাজ নদীর সঙ্গে যুক্ত। নদীটির প্রবাহে গাইঘাটা থেকে খড়ুয়া রাজাপুর গ্রামের উত্তর অংশ পর্যন্ত জোয়ার ভাটার প্রভাব দেখা যায়।

বন্যা(Flood):

  • নদীটি প্রতি বছর অববাহিকা এলাকায় বর্ষার সময় বন্যার সৃষ্টি করে। নদীটিতে প্রচুর পলি জমার কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়। ২০০০ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এই নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এক ভয়ঙ্কর বন্যা হয়। এই বন্যা এই এতদাঞ্চলের মানুষের কাছে ২০০০ সালের বন্যা নামে পরিচিত। ২০১০ ও ২০১৫ সালেও নদীটির দুই কূল প্লাবিত হয়েছিল। প্রতি বছর নদীর জলের প্লাবনে জমির ফসল নষ্ট হয়। বর্তমানে নদীটি সংস্কারের দাবি উঠেছে।

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদী অথবা বর্ষণ পুষ্ট নদ-নদী :-

 পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদ-নদী বর্ষার জলে পুষ্ট এবং এদের বেশির ভাগের উৎপত্তি স্থল হল পশ্চিমের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল। ভূমি ভাগের ঢাল অনুসারে এই নদীগুলি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ভাগীরথী- হুগলি নদীতে এসে মিলিত হয়েছে। বর্ষন পুষ্ট বা বৃষ্টির জলে সৃষ্ট নদী গুলির মধ্যে দামোদর, কংসাবতী বা কাসাই, শিলাবতী বা শিলাই, অজয়, রূপনারায়ন, ময়ূরাক্ষী, সুবর্ণরেখা, কেলেঘাই, হলদি নদী উল্লেখযোগ্য।

দামোদর নদ (Damodar river)

  • দামোদর নদ ভারতের ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একটি নদী। গঙ্গার শাখা হুগলীর উপনদী হল দামোদর। প্রতি বর্ষায় দামোদরের বন্যায় অনেক প্রাণ ও সম্পত্তি হানির কারণে দামোদর নদ “বাংলার দুঃখ” নামে আখ্যায়িত। পরবর্তীকালে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর নদী অববাহিকায় বাধ দিয়ে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে বন্যা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি দামোদর নদের অববাহিকা অঞ্চলে গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা সঞ্চয় থাকার ফলে এর উপর ভিত্তি করে দুর্গাপুর আসানসোল বার্নপুর কুলটি প্রভৃতি শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
  • উৎস : ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমিতে, পালামৌ জেলার টোরির নিকট উচ্চগিরি শৃঙ্গ।
  • মোহনা : কলকাতার ৫০কি.মি. দক্ষিণে হুগলী নদীতে সঙ্গম।
  • দৈর্ঘ্য : ৫৯২ কি.মি.
  • অববাহিকা : সর্পিল গতিতে বয়ে চলা দামোদরের ২৪,২৩৫ বর্গ কি.মি. বিস্তীর্ণ অববাহিকা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পালামৌ, হাজারীবাগ, কোডার্মা, গিরিডি, ধানবাদ, বোকারো, চাতরা জেলা, এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান ও হুগলী জেলার অধিকাংশ জুড়ে বিস্তৃত। এছাড়া ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, রাঁচি, লোহারডগা, ও দুমকা জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা, ও হাওড়া জেলার স্বল্প কিছু অংশও দামোদর উপত্যকার অংশ।
  • উপনদী : বরাকর নদী, কোনার নদ, উশ্রী, বোকারো নদী ইত্যাদি।

বরাকর নদীটি ঝাড়খন্ড এর হাজারিবাগ জেলার কাছে পদ্মা এলাকায় উৎপন্ন হয়েছে। এরপর এটি ছোটনাগপুর মালভূমির উত্তরভাগ দিয়ে ২২৫ কিলোমিটার (১৪০ মাইল) প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা ও বর্ধমান জেলা হয়ে দিশেরগড়ের কাছে দামোদর নদে মিলিত হয়েছে। মোটের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ববাহিনী এই নদীটির মোট আববাহিকার আয়তন ৬,১৫৯ বর্গ কিলোমিটার (২৩৭৮ বর্গমাইল)। এটি দামোদর নদ এর প্রধান উপনদী।এই নদীর প্রধান দু’টি উপনদী হল উশ্রী নদী (দক্ষিণ থেকে) ও বর্ষোতি নদী (উত্তর থেকে)। এছাড়াও আরও ১৫টি ছোট বড় উপনদীর জলে এই নদী পুষ্ট।

শালি নদী হল দামোদর নদের একটি উপনদী। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার উত্তরাঞ্চলে প্রবাহিত। এই নদীর উৎপত্তি গাং দুয়া ড্যাম। এটি মেজিয়া ও বাঁকুড়া শহরের মাঝামাঝি অঞ্চলে প্রবাহিত। ইন্দাস থানার অধীনস্থ সমসার গ্রামে এটি দামোদরে মিশেছে।

শাখা নদী:

  • মুণ্ডেশ্বরী নদী হল পশ্চিমবঙ্গ-এর একটি নদী। এই নদীটি হল দামোদর নদ এর প্রধান শাখা নদী। বর্ষার মরশুমে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হলে ২,০০০ কিউসেক মিটার/সেকেন্ড বা ৭০,০০০ কিউবিক ফুট/সেকেণ্ড পর্যন্ত জলের প্রবাহ এই নদী নিরাপদে বইতে পারে। কিন্তু এর থেকেও বেশি জল এই নদীতে প্রবেশ করলে দু’কূল ছাপিয়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও হুগলি জেলার বহু অংশ এর ফলে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে।

রূপনারায়ণ নদী (Rupnarayan River)

  • রূপনারায়ণ নদী হল দ্বারকেশ্বর নদ ও শিলাই নদীর মিলিত প্রবাহ। দ্বারকেশ্বর নদ পুরুলিয়ার ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঁকুড়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল শহরের কাছে শিলাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ নদীর জন্ম হয়; এরপর কিছুপথ প্রবাহিত হয়ে তা পুরনো দামোদর নদ বা মুণ্ডেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। এই মিলিত স্রোত এরপর হুগলি নদীতে এসে পড়ে।
  • নদীটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। নদীটি ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এই নদীর তীরেই স্থাপিত হয়েছে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নদীটি বর্ষার সময় বন্যার সৃষ্টি করে। তাই নদীটিতে কিছু স্থানে নদী বাঁধ গড়া হয়েছে। নদীটিকে কেন্দ্র করে জলপথে পণ্য পরিবহনের কথা ভাবছে কেন্দ্র সরকার। নদীটি বর্তমানে নাব্যতা সংকট, দূষন জলের সমস্যায় জর্জরিত।

ময়ূরাক্ষী নদী (Mayurakhi River)

ময়ূরাক্ষি নদী হল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি দামোদর নদ পরিকল্পনা (D.V.C) ব্যবস্থার অন্তর্গত। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ২৫০ কিলোমিটার।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • ময়ূরাক্ষী নদী ঝাড়খণ্ডের ত্রিকুট পাহাড় থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর পর নদীটি পূর্ববাহিনী হয়ে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর জেলা ও দুমকা জেলা অতিক্রম করে ঝাড়খন্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে বীরভূম জেলায় প্রবেশ করেছে। শেষে নদীটি মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলি নদীতে মিলিত হয়েছে। এর প্রবাহপথ জুড়ে বহু উপনদী রয়েছে। নদীটির মোট প্রবাহ পথ ২৫০ কিমি।

প্রবাহ পথের শহর : দেওঘর, দুমকা, সিউড়ি, সাঁইথিয়া।

বাঁধ :

ময়ূরাক্ষী নদী গতিপথের উপর দুটি বাঁধ বা ড্যাম লক্ষ্যণীয়। প্রথমটি হল ম্যাসানজোড় ড্যাম যেটি ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলায় দুমকা সিউড়ী রোডের পাশে অবস্থিত যেটি কানাড়া বাঁধ নামেও পরিচিত, আরেকটি হল সিউড়ী তিলপাড়া ড্যাম যেটি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সিউড়ী শহরের পাশে অবস্থিত । এই দুটি বাঁধই মূলত সেচ কার্যে ব্যবহৃত হয়। তবে ম্যাসানজোড় বাঁধ থেকে অল্প পরিমানে জ্বলবিদ্যুৎও উৎপন্ন হয়।

উপনদী :

এই নদীটির অনেক গুলি ছোট বড় উপনদী রয়েছে; যেগুলো এই নদীটির জলের প্রধান উৎস।

বাঁদিকের উপনদী: ব্রাহ্মণী নদী;

ডান দিকের উপনদী: বক্রেশ্বর নদ, কোপাই নদী, দ্বারকা নদ, কুশকর্নী নদী।

  • বক্রেশ্বর নদ হল ময়ুরাক্ষী নদীর একটি উপনদী। এটা প্রধানত ঝাড়খন্ড-এর সাঁওতাল পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এটা তারপরে বীরভূম জেলা-র কোপাই নদীতে এসে মেশে। এই সমন্বিত নদীটি মুর্শিদাবাদ জেলাতে ময়ুরাক্ষী নদীতে মেশে।

 

  • কোপাই নদী (অপর নাম শাল নদী) হল ময়ূরাক্ষী নদীর একটি উপনদী। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতন, বোলপুর, কঙ্কালীতলা ও লাভপুরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। এটি একটি ছোটো নদী। তবে বর্ষাকালে এই নদীতে বন্যা দেখা যায়।

অজয় নদ (Ajay River)

  • ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের একটি বন্যাসঙ্কুল নদী যা গঙ্গার অন্যতম প্রধান শাখা ভাগীরথী হুগলির উপনদী। অজয় নামটির অর্থ যাকে জয় করা যায় না।

উৎস ও প্রবাহপথ(Source and Flow Path) :

  • বিহারের জামুই জেলা চাকাই ব্লকের বাটপার অঞ্চলের ৩০০ মিটার উচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে এটি দেবীপুরের নিকটে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করে (দেওঘরের প্রস্তাবিত শিল্প অঞ্চল) দিয়ে গিয়ে অজয় নদ ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনের নিকট শিমজুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং এটি প্রথম পশ্চিম বর্ধমান জেলা এবং ঝাড়খণ্ড হয়ে এবং পরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া ঘাট, বীরকুলটি ঘাট, দরবারডাঙা ঘাট ও সিদ্ধপুর ঘাট হয়ে এবং বীরভূম জেলার বড়কোলা, তামড়া, বিনুই ও নবসন গ্রামের সীমানা হয়ে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম থানার নারেং গ্রামের প্রবেশ করে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথী নদীর সংগে মিলিত হয়েছে।
  • অজয় নদের মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮ কিলোমিটার (১৭৯ মাইল) তার মধ্যে শেষ ১৫২ কিলোমিটার (৯৪ মাইল) পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে।

উপনদী :

অজয়ের প্রধান উপনদীগুলি হল ঝাড়খণ্ডের পাথরো ও জয়ন্তী এবং বর্ধমানের তুমুনি ও কুনুর।

  • কুনুর নদ পূর্ব বর্ধমান জেলাতে অবস্থিত । গুসকরা শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে, মঙ্গলকোট ব্লকের নাতুনহাটের কাছে অজয় নদে গিয়ে পড়েছে। এটি অজয় নদের অন্যতম প্রধান উপনদী।
  • হিংলো হল অজয় নদের একটি উপনদী যা ঝাড়খণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলায় অজয়ের সাথে মিলিত হয়েছে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগনার জামতাড়ার নিকটবর্তী পর্বতশ্রেণী হতে উৎপন্ন হয়ে হিংলো নদী প্রায় অজয় নদের সমান্তরালে বয়ে এসে বীরভূম জেলার ভানগড়ের কিছু পরেই পলাশডাঙা গ্রামের নিকট অজয় নদে পতিত হয়। এই নদী অববাহিকার মোট আয়তন ২০০৯ হেক্টর (৪৯৬০ একর) সাধারণত বর্ষাকাল ছাড়া এতে জলের স্রোত থাকে না। এই নদীর তীরে হজরতপুর, ময়নাডল, জোফলাই ইত্যাদি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ গ্রামগুলি অবস্থিত।
  • অজয় নদের ধারা থেকে অনেকদূর অবধি পার্বত্য অঞ্চলের ল্যাটেরাইট মাটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমানের আউশগ্রামে এসে পাললিক সমভূমিতে প্রবেশ করে। অজয় নদের উপত্যকায় শাল, পিয়াল ও পলাশের ঘন জঙ্গল ছিল। কিন্তু অধুনা খনিজ উত্তোলন ও অন্যান্য মনুষ্যজনিত কারণে বেশিরভাগ জঙ্গল সাফ হয়ে গেছে। সম্প্রতি, ভারত সরকার (নৌ পরিবহন মন্ত্রক) অজয় নদকে জাতীয় নৌপথ আইন, ২০১৬.(৬)-এর আওতায় জাতীয় জলপথ -৭ হিসাবে ঘোষণা করেছে।

কংসাবতী বা কাঁসাই (Kansavati or Kansai)

দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান নদী। কালিদাসের মেঘদূত ও অন্যান্য সংস্কৃত সাহিত্যগ্রন্থে এই নদী কপিশা নামে উল্লিখিত। কিংবদন্তী অনুসারে, সমুদ্রের কাছে বাগদত্তা কংসাবতী কৃষ্ণ দামোদর নদের রূপে আলিঙ্গন করতে ছুটে এলে কংসাবতী দ্রুত ধাবমান হয়ে সমুদ্রে মিলিত হয়। মেদিনীপুর শহর এই নদীর তীরে অবস্থিত।

উৎস ও প্রবাহপথ (Source and Flow Path):

  • পুরুলিয়া জেলার ঝালদা অঞ্চলে প্রায় ৬০০ মিটার উঁচু পাহাড় ঝাবরবন কাঁসাই নালার আকারে কংসাবতী নদীর উৎপত্তি। নিকটবর্তী অযোধ্যা পাহাড় থেকে সাহারঝোরা নামে একটি ছোট নালা এরপর বেগুনকুদারের কাছে কংসাবতীতে মিশেছে। তেলদিহি গ্রামের কাছে বান্দু বা বন্ধু নদী কংসাবতীতে পড়েছে।
  • এরপর কংসাবতী পুরুলিয়া-চান্ডিল রেললাইন পেরিয়ে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে কিছুদূরে কারমারা নামার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভেদুয়া গ্রাম পার হয়ে এই নদী বাঁকুড়া জেলায় প্রবেশ করেছে। বাঁকুড়াতেই কংসাবতীর প্রধান উপনদী কুমারী নদীর সঙ্গে এর মিলন। মুকুটমণিপুরে কংসাবতী ও কুমারী নদীর মিলনস্থলে বিখ্যাত কংসাবতী বাঁধ ও জলাধারটি গড়ে উঠেছে।
  • বাঁধ ছেড়ে বেরিয়ে রায়পুরের পাশ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে মেদিনীপুর জেলার বিনপুর অঞ্চলে প্রবেশ করেছে কংসাবতী। ভৈরববাঁকী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে এরপর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করেছে এই নদী। কেশপুরের কাছে নদী দুটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। একটি শাখা দাশপুর অঞ্চলের উপর দিয়ে পালারপাই নামে প্রবাহিত হয়ে রূপনারায়ণ নদের দিকে এগিয়ে গেছে ও অপর শাখাটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে কালিয়াঘাই বা কেলেঘাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

উপনদী :

  • সাহারঝোরা অযোধ্যা পাহাড় থেকে সাহারঝোরার উৎপত্তি। মুরগুমায় এই নদীটির উপর একটি জলাধার নির্মিত হয়েছে মূল সেচকার্যের সুবিধার জন্য। তারপরে বেগুনকুদার কাছে এটি কংসাবতীতে মিশেছে।
  • বান্দু বান্দু বা বন্ধু নদী সারামবিসি, বুরুডি প্রভৃতি কয়েকটি নালার সঙ্গে মিশে সিরকাবাদের কাছে অযোধ্যা পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। তারপর ২৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তেলডিহি গ্রামের কাছে কংসাবতীতে পড়েছে।
  • কুমারী নদী কুমারী কংসাবতীর প্রধান উপনদী। এটির উৎপত্তিস্থলও অযোধ্যা পাহাড়। পাহাড়ের পূর্ব ঢাল বেয়ে নেমে আসার সময় কয়েকটি ছোটখাট নালার সঙ্গে মিলিত হয়েছে কুমারী। তারপর দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পুরুলিয়া-চান্ডিল রেললাইন পেরিয়ে বরাভূম ও মানবাজার ছুঁয়ে এটি বাঁকুড়ায় প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে যে চারটি উপনদী কুমারী নদীতে মিশেছে, তারা হল – হনুমাতা ও নাঙ্গাসাই (ডানদিকের উপনদী) এবং ঝোর ও চাকা (বাঁদিকের উপনদী)। অন্যদিকে ঝাড়খণ্ডের টোটকা নদী বান্দোয়ান পেরিয়ে মাঝিডিহির কাছে কুমারী নদীতে মিলিত হয়েছে। মুকুটমণিপুরে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমারী নদী কংসাবতীতে পতিত হয়েছে।
  • ভৈরববাঁকী ভৈরববাঁকী বাঁকুড়া জেলার রানিবাঁধে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে কংসাবতীতে মিলিত হয়েছে। এর প্রধান উপনদী তারাফেনী।

কংসাবতী জলাধার

  • খাতড়ার বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাদ্বয়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় কংসাবতী ও কুমারী নদীর সংগমস্থলের উপর কংসাবতী বাঁধ ও জলাধার নির্মিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কালে সেচের সুবিধার জন্য এই বাঁধ ও জলাধার নির্মিত হয়। বাঁধটির দৈর্ঘ্য ১০,০৯৮ মিটার ও উচ্চতা ৩৮ মিটার। জলাধারের আয়তন ৮৬ বর্গ কিলোমিটার। এই জলাধার ঘিরে মুকুটমণিপুরে একটি মনোরম পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

সুবর্ণরেখা নদী (Subarnarekha River)

  • রাঁচির কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ঊড়িষ্যার রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঊড়িষার তালসারির কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। নদীটি রাঁচির কাছে হুডু জলপ্রপাত থেকে উৎপন্ন হয়ে ঝাড়খন্ডের সিঙভূম জেলা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর (পূর্ব) ঝাড়গ্রাম (বর্তমান) জেলা হয়ে ওডিশায় প্রবেশ করে। এরপর এটি বঙ্গোপসাগরে মেশে। এই নদীর মোট দৈর্ঘ্য হল ৩৯৫ কিমি।

শিলাই বা শিলাবতী (Shilai or Shilabati)

  • দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট নদী। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে শিলাই প্রবাহিত। পুরুলিয়ার পুঞ্চা শহরের কাছে উৎপন্ন হয়ে এই নদী গভীর অরণ্যের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাঁকুড়ায় প্রবেশ করেছে। বাঁকুড়ায় শিলাই-এর প্রধান উপনদী হল জয়পাণ্ডা ও পুরন্দর। এছাড়াও আরও কয়েকটি ছোট নদী বাঁকুড়ায় শিলাই-এ মিলিত হয়েছে। তারপর সিমলাপাল হয়ে দক্ষিণপূর্বে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে শিলাই-এর প্রধান উপনদী কুলবাই, তমাল ও পারাং। তার মধ্যে কুলবাই বা কুবাই নদী টাঙ্গাসোলের কাছে উৎপন্ন হয়ে মেদিনীপুর-বাঁকুড়া রেললাইন পেরিয়ে মুগবসনের কাছে তমাল নদীতে মিলিত হয়েছে ও এই মিলিত প্রবাহ নাড়াজোলের কাছে শিলাই নদীতে মিশেছে। তবে বর্ষাকাল ছাড়া শিলাই বা তার উপনদীগুলিতে জল বিশেষ থাকে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ও খড়কুসমা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শিলাই ঘাটালের কাছে দ্বারকেশ্বর নদে মিশেছে। ঘাটাল এই নদীর তীরে অবস্থিত একমাত্র শহর ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র।

দ্বারকেশ্বর বা ঢলকিশোর বা ধলকিশোর নদ (Dwarkeswar or Dhalkishore or Dhalkishore River)

  • দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম প্রধান নদ। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে শিলাই প্রবাহিত। পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর থানার আর্দ্রা শহর ও হুড়া গ্রামের মাঝে অবস্থিত একটি ঝিল থেকে উৎপন্ন হয়ে দ্বারকেশ্বর নদ পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। কিছুদূরে রোক ও দুধভরিয়া নামে দুটি নালা এই নদে এসে মিলিত হয়েছে। বাঁকুড়া জেলার ছাতনার কাছে কুমাসি নদী দ্বারকেশ্বরে মিশেছে। বাঁকুড়া শহরের কাছে প্রতাপপুরে গন্ধেশ্বরী নদী দ্বারকেশ্বরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই জেলাইয় দ্বারকেশ্বরের অপর চারটি উপনদী হল – বিড়াই, আড়কুশা, হোরিংমুড়ি ও ছোলাকান্ডার। তারপর দক্ষিণপূর্বে প্রবাহিত হয়ে আরামবাগ মহকুমার কুমারগঞ্জের এটি হুগলি জেলায় প্রবেশ করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের কাছে শিলাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে দ্বারকেশ্বর রূপনারায়ণ নামে প্রবাহিত হয়েছে। দ্বারকেশ্বর সাধারণত একটি জলহীন নদী। এর তলদেশ বালুকাময়। তবে বর্ষাকালে দুই কূল ছাপিয়ে বন্যা হয়। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও আরামবাগ শহর তিনটি এই নদীর তীরে অবস্থিত।

কেলেঘাই বা কালিয়াঘাই (Keleghai or Kaliaghai)

  • নদীটি উৎপন্ন হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার কলসিভাঙা গ্রামে। তারপর ভগবানপুর ও সবং-এর নইপুর ছাড়িয়ে জলপাই –এর কাছে এই নদী কংসাবতী নদীতে মিলিত হয়েছে। কেলেঘাই কংসাবতীর ডানতীরের উপনদী। কেলেঘাইয়ের প্রধান উপনদী দুটি – কপালেশ্বরী ও চন্ডিয়া। কপালেশ্বরী সবং ব্লকের লাঙলকাটায় ও চন্ডিয়া শ্যামচকের কাছে উদ্ভূত হয়ে ময়নার কাছে কেলেঘাইতে মিশেছে। কপালেশ্বরী ও কেলেঘাইয়ের মিলনস্থলে শালমারির জলা নামে একটি জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে যা প্রতিবছর বর্ষায় নদীর জলে প্লাবিত হয়। কংসাবতী ও কেলেঘাইয়ের মিলিত প্রবাহ হলদি নদী নামে পরিচিত।

গন্ধেশ্বরী নদী(Gandheshwari River)

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার একটি নদী। এটি দ্বারকেশ্বর নদের একটি উপনদী। এর দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার। বাঁকুড়া শহরের উত্তরে এবং শুশুনিয়া পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত এই নদী ভুতশহরের কাছে দ্বারকেশ্বর নদে পতিত হয়েছে। বর্ষাকালে এই নদীতে প্রবল বন্যা হয়।

হলদি নদী (Haldi River) 

  • কংসাবতী ও কেলেঘাই নদীর যুগ্ম প্রবাহের নাম। কেশবপুরের কাছে দুই নদী মিলিত হয়ে হলদি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। রূপনারায়ণ ও হুগলি নদীর মিলনস্থলের অদূরে হলদি হুগলি নদীতে মিশেছে।নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ২৪ কিমি। হলদি নদীর অববাহিকাটির মোট আয়তন ১০,২১০ বর্গ কিলোমিটার। ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের পরিকল্পনামাফিক এই হলদি নদীর মোহনার কাছেই বাংলার নতুন বন্দর-নগরী হলদিয়া ও হলদিয়া বন্দর গড়ে উঠেছে।

ব্রাহ্মণী নদী (Brahmani River)

  • পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার অন্যতম প্রধান উপনদী। এটি গঙ্গার ডানতীরের উপনদী। এর অপর নাম কালিন্দী। ব্রাহ্মণী নদী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুধুয়া পাহাড়ে উৎপন্ন। বীরভূমের নারায়ণপুরের কাছে এটি পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। এই নদীর অধিকাংশ প্রবাহপথ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলাদ্বয়েই অবস্থিত। মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমায় এটি ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
  • ব্রাহ্মণীর প্রধান উপনদীগুলি হল ত্রিপিতা, গামারি ও দ্বারকা। গামারি বীরভূম জেলার উত্তর সীমান্তের কাছে উৎপন্ন হয়ে মুর্শিদাবাদে ব্রাহ্মণীতে মিশেছে। কান্দি মহকুমার সাঁকোঘাট গ্রামের কাছে দ্বারকা ব্রাহ্মণীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণী নর্থ ক্যানাল নামে একটি পুরনো সেচখাল মণিগ্রামের কাছে ব্রাহ্মণী থেকে বেরিয়ে বীরভূমের চাতরা, নলহাটি, সিউড়ি, চিনপাই, ইলামবাজার, বোলপুর, নানুর ও কালীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • নলহাটির অদূরে ভদ্রপুরে ব্রাহ্মণীর তীরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি পুরনো রেশমকুঠি এবং আকালি গ্রামে মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত একটি কালী মন্দির আছে।

দ্বারকা নদ (Dwarka River)

  • অপর নাম বাবলা নদ  ভাগীরথী নদীর একটি উপনদী। দ্বারকা নদের উৎপত্তি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগনা বিভাগে। সেখান থেকে মহম্মদবাজারের কাছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রবেশ করে বীরভূম জেলার দেউচা এবং পরে ময়ূরেশ্বর ও রামপুরহাট থানা এলাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শেষে মুর্শিদাবাদ জেলায় এটি ভাগীরথী নদীতে মিলিত হয়েছে। দুটি শক্তি মন্দির এই নদের তীরে অবস্থিত। এদুটি হল দ্বারবাসিনী ও তারাপীঠ। দ্বারকা নদ ছোটো হলেও এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত এবং এটির বহু ছোটো উপনদী ও শাখানদী রয়েছে। এর বহু খালও ভাগীরথীর সঙ্গে যুক্ত। এটি একটি পাহাড়ি নদ এবং এই নদের অববাহিকা হলুদ পাথরে আকীর্ণ। বামিনী, কুলিয়া, ঘাড়মোড়া, চিলা ইত্যাদি কয়েকটি ছোটো নদী এর উপনদী। অতীতে দ্বারকা নদ যথেষ্ট বেগবান ছিল বলে অনুমান।

বাঁশলোই নদী (Bansaloi River)

  • ভাগীরথী নদীর একটি উপনদী। বাঁশলোই নদীর উৎপত্তি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলার বাঁশ পাহাড়ে। এটি ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জঙ্গিপুরের উত্তরে হুগলি নদীতে মিশেছে। এই নদীর অববাহিকা অঞ্চলের আয়তন ২,২০০ বর্গকিলোমিটার।

রসুলপুর নদী (Rasulpur river)

  • ভারতের পশ্চিমঙ্গ রাজ্যের উপকূলবর্তী একটি নদী। এই নদী হুগথি নদীর একটি উপনদী। এই নদীটি পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাগদা নদীটি কালিনগর পর্যন্ত প্রবাহের পর এটি রসুলপুর নদী নামে প্রবাহিত হয়েছে। এই উপনদী গুলি হল- ইটাবেরিয়া খাল, মুগবেরিয়া খাল, পালাবন খাল। নদীটি কাওয়াখালি লাইট হাউজ বা বাতিঘরের কাছে সাগর দ্বীপের বিপরীতে হুগলি নদীতে মিলিত হয়েছে।

দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী অথবা জোয়ার ভাটা জলে প্লাবিত নদ-নদী :-

 জোয়ারের জলে প্লাবিত নদী বলতে সুন্দরবনের অন্তর্গত নদী এবং সামুদ্রিক খাড়ি গুলিকে বোঝায়। এরা মূলত ভাগীরথী ও হুগলি নদীর শাখানদী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা একে অপরের সাথে যুক্ত। এই নদী গুলির মধ্যে মাতলা, হাড়িয়াভাঙ্গা, পিয়ালী, ঠাকুরান, সপ্তমুখী, গোসাবা, রায়মঙ্গল, ইচ্ছামতি প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ঠাকুরণ নদ (Thakuran river)

ভারতের পূর্বদিকে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে সুন্দরবনাঞ্চলে প্রবাহিত একটি জোয়ারের জলে পুষ্ট নদী৷

উৎপত্তি ও প্রবাহ(Source and Flow path :

  • নদীটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরের নিকট উৎপত্তি লাভ করেছে৷ নদীটির সাথে শাখাপথে ও খালপথে সংযোগ রয়েছে সুন্দরবনের বৃহৎ নদীগুলির অন্যতম সপ্তমুখী নদীর সাথে৷ এটি জয়নগর ১ ও মথুরাপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করেছে৷

প্রবাহপথের বর্ণনা:

  • ঠাকুরণ নদীব্যবস্থা উৎপত্তিস্থল থেকে বঙ্গোপসাগরের নিকট অধিক প্রশস্ত৷ ঠাকুরণ নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত পার্শ্বীয় শাখাগুলি হলো; কদ্রুখালি খাল, দমদমা খাল, মণি নদী, পুকছড়া, রায়দিঘী, শিবুয়া নদী, পাখিরালি খাল এবং রসের খাঁড়ি৷ আবার পূর্বতীরে অবস্থিত পার্শ্বীয় শাখাগুলি মূলত বিসর্প পথে গতিমান যেমন; বৈঁচাপি খাল, গুরা খাল, কাইকলমারি-আজমলমারি-সুইয়া নদী, দুলিভাসানী নদী এবং চুলকাটি নদী৷ প্রতিটি বিসর্পপথই জোয়ারের ফলে একে অপরের সাথে অন্তর্যুক্ত হয়ে পড়ে নদীজালিকা গঠন করে৷
  • ঠাকুরণ নদীর দুইতীরে অবস্থিত বনাঞ্চল আইনের আওতায় সংরক্ষিত৷ এগুলি মূলত লবণাম্বুজ জাতীয়৷ নদীর পূর্বতীরের অংশ সুন্দরবনের ব্যাঘ্র অভয়ারণ্য অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানে পশু ও পক্ষীবিশারদ এবং পর্যটক ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ৷
  • নদীর তীরে বেশির্ভাগ স্থানে পরিকল্পিতভাবে উঁচু নদীবাঁধ দেওয়া হলেও প্রায় সময়েই জলস্তর বৃদ্ধির কারণে নদীর দুকুল উপচে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷

পিয়ালি নদী (Piyali river)

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন অঞ্চলের একটি জোয়ার-সম্বন্ধীয় মোহনাজ নদী। বামনঘাটার ১৪ কিলোমিটার বিদ্যাধরী নদী থেকে পিয়ালি নদীর উৎপত্তি। এরপর দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ক্যানিং-এর প্রায় ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে মাতলা নদীতে মিশেছে। মাতলা নদীর সঙ্গে পিয়ালি কুলতলা গাঙের মাধ্যমেও যুক্ত যেটি আবার ঠাকুরান নদীর সঙ্গে যুক্ত।

মুড়িগঙ্গা নদী (Muriganga River)

  • পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর একটি শাখা নদী। এটি বরতলা নদী বা চ্যানেল খাঁড়ি হিসাবেও পরিচিত। নদীটি সাগর দ্বীপ এর পূর্ব পাশ দিয়ে ৩০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে।হুগলি নদীটি বঙ্গোপসাগরে মিলিত হওয়ার কিছু আগে সাগর দ্বীপের উত্তর প্রান্তে হুগলি নদী থেকে মুড়ি গঙ্গা নদী উৎপন্ন হয়ে সাগর দ্বীপের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপোসাগের মিলিত হয়েছে।

মাতলা নদী (Matla River)

  • পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি প্রবাহ পথে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি প্রবাহ কুলতলি গরানবোস হয়ে সুন্দরবন গেছে অন্য প্রবাহটি বাসন্তি, পাঠানখালি, সূর্যবেড়িয়া হয়ে বিদ্যাধরী নদীতে মিলিত হয়েছে।
  • বর্ষার সময় মাতলা নদীতে জল প্রবাহ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় ফলে নদীটিতে নৌকা বা লঞ্চ চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে আবার শুষ্ক মরশুমে নদীটিতে জলের প্রবাহ কমে যায় ফলে নৌকা বা লঞ্চ নদীর তীরের জেটিতে আসতে পারেনা। বর্ষার সময় নদীটি দুই তীরে প্লাবিত করে বন্যা সৃষ্ট করে। তাই মাতলা নদীর পাড় বরাবর আশেপাশের অঞ্চলের গ্রামগুলিকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
  • ক্যানিং শহরে মাতলা নদীর উপর ৬৪৪ মিটার (২,১১৩ ফুট) দীর্ঘ একটি সেতু উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০১১ সালের জানুায়ারি মাসে। সেতুটি মাতলা সেতু নামে পরিচিত। এই সেতু ক্যানিং ও বাসন্তীকে যুক্ত করেছে। সেতুটি অবস্থান করছে ২২°১৮′২০″ উত্তর ৮৮°৪০′৪৬″ পূর্ব।

গোসাবা নদী (Matla River)

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবন এলাকার একটি উপকূলবর্তী নদী। এই নদী সমুদ্রের জোয়ারের জলে পুষ্ট তাই এ নদীর জল লবণাক্ত। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত। এই নদী মাতলা ও রায়মঙ্গল নদীর মিলনের ফলে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি উৎপন্ন হয়ে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

সপ্তমুখী নদী (Seven-faced River)

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবন এলাকার একটি উপকূলবর্তী নদী। এই নদী জোয়ারের জলে পুষ্ট। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত। নদীটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুলতানপুরে উৎপন্ন হয়েছে। এর পর নদীটি কুলপি ও মথুরাপুর ব্লকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিহ হয়েছে। প্রবাহ পথে নদীটি মুড়িগঙ্গা নদী ও দেওগ্রা খালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। নদীটির মোট প্রবাহ পথের দৈর্ঘ্য হল ৮০ কিলোমিটার।

রায়মঙ্গল নদী (Rayamangal River)

  • বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৬২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২২৬৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
  • রায়মঙ্গল নদীটি সুন্দরবনের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের কাছে ইছামতি নদী কয়েকটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঝিলা নদী, কালিন্দী নদী এবং যমুনা নদী। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে এই নদীগুলো প্রশাখা বিস্তার করেছে। নদীটি সুন্দরবনের অভ্যন্তরস্থ নৌচলাচল পথ হিসেবে নদীটি ব্যবহৃত হয়। নদীটি উপকূলীয় জোয়ার ভাঁটার নদী।

বিদ্যাধরী নদী বা বিদ্যা নদী (Vidyadhari River or Vidya River)

  • পশ্চিমবঙ্গের একটি নদী। এই নদীর উৎসস্থল নদিয়া জেলার হরিণঘাটা। এরপর বিদ্যাধরী উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসত, দেগঙ্গা ও হাবরা এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুন্দরবনে রায়মঙ্গল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বিদ্যাধরী নদী প্রাচীন বঙ্গীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান নদীপথ ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এই নদীর তীরেই চন্দ্রকেতুগড় নদীবন্দরটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে এই নদী উত্তর চব্বিশ পরগনা ও কলকাতার অন্যতম প্রধান নিকাশি মাধ্যম।
  • সুন্দরবন এলাকায় পরস্পরসংযুক্ত একাধিক জলপথের জটিল আবর্তের দেখা যায়। এই অঞ্চলের বৃহৎ নদীগুলি অনেক ক্ষেত্রেই এক মাইল চওড়া ও দক্ষিণবাহী। বিদ্যাধরী নদীও অনুরূপ একটি নদী। গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এবং সপ্তদশ শতাব্দীর পর থেকে হুগলি নদীর পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে এই নদীতে মিষ্টি জলের পরিমাণ অল্পই।

কালিন্দী নদী (Kalindi River)

  • সুন্দরবনের কাছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের কাছে ইছামতি নদী কয়েকটি জলধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রায়মঙ্গল নদী, বিদ্যাধরী নদী, ঝিলা নদী, কালিন্দী নদী এবং যমুনা নদী। সুন্দরবনের উপকূল জুড়ে এই নদীগুলো প্রশাখা বিস্তার করেছে।

সুন্দরবন অঞ্চলের নদী গুলির বৈশিষ্ট্য :-

  •  সামুদ্রিক জোয়ারে নদী গুলি প্লাবিত হওয়ায় জোয়ারের সময় নদী গুলিতে নৌকা চলাচল করলেও ভাটার সময় নদীগুলি নৌপরিবহনে অযোগ্য।
  •  সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় নদীগুলির জল লবণাক্ত হয়ে পড়েছে।
  •  অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নদীগুলি সামুদ্রিক খাড়িতে পর্যবসিত হয়েছে।
  •  নদীখাত গুলি দীর্ঘদিনের পলি সঞ্চায়ে ভরাট হয়ে পড়েছে তাই নদীগুলি অত্যন্ত অগভীর এবং অনেক সময় নদীগুলি তাদের মূল প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
  •  সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার ফলে মৎস্য শিকারে নদীগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি এই নদীগুলি স্থানীয় জীবনযাত্রা প্রণালীকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।

Riverside Town In West Bengal

ক্রমিক নং নদী তীরবর্তী শহর নদীর নাম জেলার নাম
কাটোয়া ভাগীরথী পূর্ব বর্ধমান
বর্ধমান দামোদর পূর্ব বর্ধমান
আসানসোল দামোদর পশ্চিম বর্ধমান
রানীগঞ্জ দামোদর পশ্চিম বর্ধমান
দুর্গাপুর দামোদর পশ্চিম বর্ধমান
রাণাঘাট চূর্ণী নদীয়া
কৃষ্ণনগর জলঙ্গি নদীয়া
নবদ্বীপ ভাগীরথী নদীয়া
শান্তিপুর চূর্ণী নদীয়া
১০ চন্দননগর হুগলী হুগলী
১১ ত্রিবেণী হুগলী হুগলী
১২ বেলুড় কোপাই হাওড়া
১৩ হাওড়া হুগলী হাওড়া
১৪ সিউড়ি ময়ুরাক্ষী বীরভূম
১৫ শান্তিনিকেতন অজয় বীরভূম
১৬ তারাপীঠ দ্বারকা বীরভূম
১৭ ইলাম বাজার অজয় বীরভূম
১৮ কেদুলি অজয় বীরভূম
১৯ কোলাঘাট রূপনারায়ন পুর্ব মেদিনীপুর
২০ তমলুক রূপনারায়ন পুর্ব মেদিনীপুর
২১ হলদিয়া হলদি পুর্ব মেদিনীপুর
২২ বহরমপুর ভাগীরথী মুর্শিদাবাদ
২৩ মুর্শিদাবাদ ভাগীরথী মুর্শিদাবাদ
২৪ বনগাঁ ইছামতি উত্তর ২৪ পরগনা
২৫ ব্যারাকপুর হুগলী উত্তর ২৪ পরগনা
২৬ হাসনাবাদ ইছামতি উত্তর ২৪ পরগনা
২৭ বসিরহাট ইছামতি উত্তর ২৪ পরগনা
২৮ ক্যানিং মাতলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা
২৯ ইসলামপুর মহানন্দা উত্তর দিনাজপুর
৩০ ইটাহার মহানন্দা উত্তর দিনাজপুর
৩১ বালুরঘাট আত্রেয়ী দক্ষিণ দিনাজপুর
৩২ শিলিগুড়ি মহানন্দা দার্জিলিং
৩৩ কালিম্পং তিস্তা কালিম্পং
৩৪ কোচবিহার তোর্সা কোচবিহার
৩৫ মাথাভাঙা জলঢাকা কোচবিহার
৩৬ জলপাইগুড়ি তিস্তা জলপাইগুড়ি
৩৭ জলপাইগুড়ি সদর করলা জলপাইগুড়ি
৩৮ ধূপগুরি জলঢাকা জলপাইগুড়ি
৩৯ মালদহ মহানন্দা মালদাহ
৪০ ইংরেজ বাজার মহানন্দা মালদা
৪১ আলিপুরদুয়ার তোর্সা তোর্সা
৪২ কলকাতা হুগলী কলকাতা
৪৩ মেদিনীপুর কংসাবতী পশ্চিম মেদিনীপুর
৪৪ বাঁকুড়া গন্ধেশ্বরী / ধলকিশোর বাঁকুড়া
৪৫ পুরুলিয়া কংসাবতী পুরুলিয়া

WBCS Mahapack PRO

Adda247 ইউটিউব চ্যানেল – Adda247 YouTube Channel

Adda247 টেলিগ্রাম চ্যানেল – Adda247 Telegram Channel

Sharing is caring!

FAQs

How many rivers are there in West Bengal?

If there are many rivers in West Bengal, read this article to know more.

Which is the largest river in West Bengal?

Damodar is the largest river in West Bengal.