Haryanka Dynasty
Haryanka Dynasty: হর্যাঙ্ক রাজবংশ ছিল মগধের তৃতীয় শাসক বংশ। এটি প্রাচীন ভারতের একটি সাম্রাজ্য, যেটি প্রদ্যোতা রাজবংশ এবং বৃহদ্রথ রাজবংশের উত্তরাধিকারী হয়েছিল। প্রথমে রাজধানী ছিল রাজগৃহ। পরে উদয়িনের রাজত্বকালে এটি ভারতের বর্তমান পাটনার কাছে পাটলিপুত্রে স্থানান্তরিত হয়। বিম্বিসারকে রাজবংশের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশ অনুসারে, বিম্বিসার পনের বছর বয়সে তার পিতা ভাট্টিয়া কর্তৃক রাজার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। এই রাজবংশের উত্তরসূরি হল শিশুনাগ রাজবংশ।
Haryanka Dynasty, History
হর্যাঙ্ক রাজবংশ ছিল একটি প্রাচীন ভারতীয় রাজবংশ যা খ্রিস্টপূর্ব 6 থেকে 5ম শতাব্দীতে বর্তমান ভারতের বিহারের মগধ অঞ্চলে শাসন করেছিল। এটি ছিল ভারতের নথিভুক্ত ইতিহাসে প্রথম ঐতিহাসিক রাজবংশের আবির্ভাব।
হর্যাঙ্ক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিম্বিসার, যিনি 543 খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। বিম্বিসার একজন দক্ষ শাসক ছিলেন এবং তিনি সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে মগধের অঞ্চল প্রসারিত করেছিলেন। তিনি বৈবাহিক জোটের নীতি অনুসরণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন রাজকীয় পরিবারে বিয়ে করেছিলেন, যা তাকে তার রাজ্যকে শক্তিশালী করতে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।
বিম্বিসারের পুত্র, অজাতশত্রু, মগধের শাসক হিসাবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। অজাতশত্রু তার পিতার সম্প্রসারণবাদী নীতি অব্যাহত রাখেন এবং বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি মগধের রাজধানী শহর পাটলিপুত্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কৃতিত্বপূর্ণ, যেটি হর্যাঙ্ক রাজবংশের সময় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
অজাতশত্রুর পুত্র উদয়িনের শাসনে হর্যাঙ্ক রাজবংশ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। মগধের সীমানা আরও প্রসারিত করা এবং এই অঞ্চলে এর শক্তি সুসংহত করার কৃতিত্ব তাকে দেওয়া হয়। উদয়িন একটি কেন্দ্রীভূত প্রশাসনও প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার রাজ্যের শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়ন করেন।
উদয়িনের পর, হর্যাঙ্ক রাজবংশ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও পতনের সম্মুখীন হয়। রাজবংশের শেষ শাসক ছিলেন নাগাদাসক, যিনি খ্রিস্টপূর্ব 5ম শতাব্দীর মাঝামাঝি শিশুনাগ রাজবংশ কর্তৃক উৎখাত হয়েছিল।
হর্যাঙ্ক রাজবংশ প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের শাসনাধীনে মগধ একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয় এবং পরবর্তী মৌর্য সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করে, যা খ্রিস্টপূর্ব 4র্থ শতাব্দীতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের নেতৃত্বে আবির্ভূত হয়।
Haryanka Dynasty, Rulers
হর্যাঙ্ক বংশের শাসকদের সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বিম্বিসার
বিম্বিসার মগধে রাজত্ব করেছিলেন 545 থেকে 493 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। ‘মহাবগ্গে’ তাঁর রাজ্যের ব্যাপ্তি উল্লেখ আছে। তাঁর উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন সোনা কলিবিসা, সুমনা, কোলিয়া, কুম্ভঘোষক (কোষাধ্যক্ষ) এবং জীবক (চিকিৎসক)। বিম্বিসারকে ‘সেনিয়া’ উপাধি দেওয়া হয়।
জৈন এবং বৌদ্ধ উভয় গ্রন্থই দাবি করে যে রাজা তাদের নিজ নিজ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। ‘উত্তরাধ্যায়ণ’ সূত্র বলে যে তিনি মহাবীরের অনুসারী ছিলেন যেখানে সুত্ত নিপাতা তাকে এবং তার স্ত্রী খেমাকে বুদ্ধের অনুসারী হিসাবে চিত্রিত করেছেন। পরবর্তীতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে তিনি বুদ্ধের সংঘকে সাহায্য করার জন্য জীবককে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি চেল্লানা এবং পাসেনাদির বোন কোশলা দেবীকেও বিয়ে করেছিলেন।
জর্জ টার্নারের এবং এন.এল. দের মতে বিম্বিসারের পিতার নাম ছিল ভাটিয়া বা ভাটিয়া কিন্তু পুরাণ তাঁকে হেমাজিৎ, ক্ষেমাজিৎ, ক্ষেত্রোজ বা ক্ষেত্ররাজ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তিব্বতি গ্রন্থে তাঁকে মহাপদ্ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অজাতশত্রু
অজাতশত্রু মগধে 493 থেকে 462 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। তিনি কোশলের রাজকন্যা বজিরাকে বিয়ে করেছিলেন।বিভিন্ন গ্রন্থ সূত্রে জানা যায় যে, বিম্বিসারকে তার পুত্র এবং উত্তরাধিকারী অজাতশত্রু দ্বারা বন্দী করা হয়েছিল এবং হত্যা করা হয়েছিল। যার শাসনের অধীনে রাজবংশ তার সর্বাধিক মাত্রায় পৌঁছেছিল। অজাতশত্রু মহাবীর (599-527 BCE) এবং গৌতম বুদ্ধের (563-483 BCE) সমসাময়িক ছিলেন। অজাতশত্রু লিচ্ছবিদের দ্বারা শাসিত বজ্জিকা দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাদের পরাজিত করেছিলেন।
উদয়ভদ্র
উদয়িন বা উদয়ভদ্রকে বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থে অজাতশত্রুর উত্তরসূরি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুরাণে অবশ্য তাঁকে দর্শকের পর চতুর্থ রাজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
Haryanka Dynasty, Important Points
হর্যাঙ্ক বংশ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেগুলি সরকারি চাকরি পরীক্ষাতে আসে সেগুলি জেনে নিন।
- জৈনদের মতে প্রাচীনকালে থেকে 24 জন তীর্থঙ্কর বা মুক্তির পথ নির্মাতা জৈন ধর্ম প্রচার করে গেছেন।
- ‘তীর্থঙ্কর’ শব্দের অর্থ- তীর্থ বা সংসার দুঃখ পার করার ঘাট।
- ত্রয়োবিংশ বা 23 তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ -ই ছিলেন জৈন ধর্মের প্রকৃত প্রবর্তক।
- তিনি ছিলেন বেনারসের রাজা অশ্বসেনের পুত্র।
- দীর্ঘ চুরাশি দিন কঠোর তপস্যার পর তিনি জ্ঞানালোক প্রাপ্ত হন।
- পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত ধর্মের মূলমন্ত্র ছিল ‘চতুর্যাম’ (অহিংসা, সত্য,অচৌর্য এবং অপরিগ্রহ)।
- আনুমানিক 540 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে বৈশালীর উপকণ্ঠে কুন্ডগ্রাম( বর্তমানে বসকুন্ড)নামক স্থানে জ্ঞাতৃক নামে ক্ষত্রিয় রাজকুলে মহাবীর জন্মগ্রহণ করেন।
- তিনি তিনটি নামে পরিচিত ছিলেন- বর্ধমান (তার পিতার রাজ্যের ধনসম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল), মহাবীর দুঃখ-কষ্টকে বীরত্বের সহিত মোকাবিলা করার মানসিকতা), জ্ঞাতপুত্র(জ্ঞাতৃক বংশে জন্ম) তবে তার পিতৃদত্ত নাম হল- বর্ধমান।
- তার মাতার নাম হল-ত্রিশলা(লিচ্ছবি নৃপতি চেতকের বোন এবং পিতা ছিলেন সিদ্ধার্থ।
- পিতা মাতার মৃত্যুর পরে 30 বছর বয়সে তিনি সংসার ত্যাগ করেন।
- তিনি দীর্ঘ 12 বছর কঠোর তপস্যা করেন। ঋজু পালিকা নদীর তীরে এক শাল গাছের নিচে তিনি কৈবল্য বা সিদ্ধিলাভ করে ‘জিন বা জিতেন্দ্রীয়’ নামে খ্যাত হন এবং চিরতরে বস্ত্র ত্যাগ করেন।
- ‘ জিন’ থেকে তাঁর শিষ্যদের ‘জৈন’ বলা হয়।
- মহাবীরের নীতি ‘পঞ্চমহাব্রত’ নামে পরিচিত।
- তিনি পার্শ্বনাথের ‘চতুর্যামের’ সহিত ‘ব্রহ্মচর্য’ যুক্ত করেন।
- জৈন ধর্মের ত্রিরত্ন হল- সৎ বিশ্বাস, সৎ জ্ঞান এবং সৎ আচরণ।
- জৈনধর্ম সর্বপ্রাণবাদে।বিশ্বাসী।
- জৈনরা বেদেরঅভ্রান্ততা, যাগযজ্ঞের কার্যকরিতা বা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী না হলেও কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী।
- খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষভাগে জৈনধর্ম দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
- ভদ্রবাহুর অনুগামীরা’ দিগম্বর’ এবং স্থুলভদ্রের অনুগামীরা ‘শ্বেতাম্বর’ নামে পরিচিত।
- কলিঙ্গরাজ খারবেল,গুজরাট রাজ জয়সিংহ ও কুমারপাল প্রভৃতি শাসকেরা জৈন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ।
ADDA247 Bengali Homepage | Click Here |
ADDA247 Bengali Study Material | Click Here |